গবেষকদের মতে, কোনো কিছু শেখার বেলায় ছোট ছোট বিরতি নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কিছু শেখার মাঝখানে মাত্র ১০ সেকেন্ড বিরতি নিলেও মস্তিষ্ক বিষয়টি নিয়ে পুনরায় নাড়াচাড়া করার এবং সব তথ্য একত্র করার সুযোগ পায়। এতে দক্ষতা অর্জনের ক্ষমতা বাড়ে। ফলে কাজের মানের উন্নতি ঘটে, শেখাটাও হয় পাকাপোক্ত।
ছোট্ট বিরতি নেওয়ার সময় মস্তিষ্ক অলস বসে থাকে না। আপনি যে বিষয়টি শিখছেন, সে বিষয় নিয়ে মস্তিষ্ক তখন স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও ২০–৩০ বেশি গুণ দ্রুত চিন্তা করে। এই চিন্তা কখনো কখনো উল্টো দিক থেকে শুরু হয়। বলা চলে, আপনার মস্তিষ্ক আপনার কাজগুলোকে ‘রিওয়াইন্ড’ ও ‘রিভিউ’ করে। এতে আপনার মস্তিষ্কের সঙ্গে আপনার নতুন শেখা বিষয়বস্তুর সংযোগ হয় আরও দৃঢ়।
ধরা যাক, আপনি পিয়ানো বাজানো বা টেনিস খেলা শিখছেন। কয়েকবার অনুশীলন করার পর আপনি ছোট্ট একটা বিরতি নিলেন। এই বিরতির সময় আপনার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো আরও দ্রুত কাজ করতে শুরু করে। অনুশীলনের সময় আপনি যা যা করছিলেন, মস্তিষ্ক আদতে সেসব অনুকরণ করতে থাকে। অর্থাৎ বিরতির সময় আপনি কাজ করেন না ঠিকই, কিন্তু একটু আগে কীভাবে কাজটা করছিলেন, তা নিয়েই ভাবতে থাকে আপনার মস্তিষ্ক। আরও ভেঙে বললে, আপনি কোনো নড়াচড়া ছাড়াই মনে মনে অনুশীলন করতে থাকেন।
আগেই বলেছি, বিরতির এই সময়টুকুতে মস্তিষ্ক থাকে খুব সক্রিয়। আপনার ভুলত্রুটিগুলোও ধরিয়ে দেয়। এ কারণেই পরবর্তী সময়ে যখন আপনি কাজটি আবারও করতে যান, তখন আপনার কাজের মান আগের চেয়ে ভালো হয়।
আমরা যখন বিরতিহীনভাবে কোনো কাজ শিখতে আর চর্চা করতে থাকি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সব তথ্য নিয়ে নাড়াচাড়া করার মতো যথেষ্ট সময় পায় না। কিন্তু যখন একটা বিরতি নেওয়া হয়, তখন মস্তিষ্ক সব তথ্য ঢেলে সাজানোর এবং নির্দিষ্ট একটি দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত স্নায়বিক পথগুলোকে আরও দৃঢ় করার সুযোগ পায়। বলা চলে, এতে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়। চর্চাগুলো ইট তৈরি করে, আর বিরতি সেই ইটগুলো যথাস্থানে ধরে রাখার জন্য আপনার মস্তিষ্কে সিমেন্ট লাগিয়ে দেয়।
কাজটি ছোট ছোট ভাগ করে চর্চা করুন। একেক ভাগের জন্য কয়েক মিনিট বরাদ্দ রাখুন।
ছোট ছোট বিরতি নিন। ১০–১৫ সেকেন্ড সম্পূর্ণ বিরতি নিন। আপনার মস্তিষ্ককে তার নিজের কাজ করতে দিন।
প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন।
এই পদ্ধতি পড়াশোনা, খেলাধুলা থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু শেখার বেলায়ই কার্যকর। এই প্রক্রিয়া ক্লান্তি কমাতে এবং কাজে দ্রুত উন্নতি করতেও সহায়তা করে।
মস্তিষ্ক কীভাবে শিক্ষা নেয়, তা জানা থাকলে আমরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং চর্চার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারব। এই গবেষণা প্রমাণ করে কখনো কখনো কোনো কাজ না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এরপর যখন কিছুর চর্চা করবেন, তখন মনে রাখবেন, থেমে থাওয়া মানেই ফাঁকিবাজি নয়; এটি ভালোভাবে শেখার কৌশলের একটি অংশ।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট