রমনায় ২১ জুলাইয়ের বিকেলটা অন্য রকম মনে হলো। তিনটা বাজার আগে থেকেই আসতে থাকে বইপাগল মানুষেরা। ব্যাগ থেকে চাদর বের করে সবুজ ঘাসে বিছিয়ে বই পড়তে বসে যান তাঁরা। কেউ বের করেন রংতুলি। কেউ প্রিয় পোষ্যর সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠেন। বাইরের দেশগুলোয় এমন দৃশ্য অহরহ চোখে পড়লেও আমাদের দেশের পার্কে এমনটা দেখা যায় না। সম্প্রতি ভারতের একটি পার্কে এমন একটি উদ্যোগের খবর পড়ে দেশে বইপ্রেমীদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিজ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সাইলেন্ট রিডিং ইনিশিয়েটিভ নামের এই উদ্যোগের প্রথম আয়োজনেই লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। নীরবে বই পড়ার উৎসবে যোগ দিতে এসে বইপড়ুয়ারা শতরঞ্জি বা বিছানার চাদর বিছিয়ে, কেউ বসে, কেউ শুয়ে বই পড়ে সময় পার করেন। অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ফলমূল ও শুকনা খাবার। একান্তে বসে সবুজ মাঠে নিজেদের পছন্দের বই পড়েন নানা বয়সের পাঠক।
এখন থেকে প্রতি শুক্রবার রমনা পার্কে এই কর্মসূচি চলবে। ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিজের প্রতিষ্ঠাতা মিথুন দাস বলেন, ‘শুধু এক দিনকে কেন্দ্র করে নয়, বরং নিয়মিত এই ইতিবাচক আয়োজন করতে চাই আমরা। শুধু বই পড়া নয়, সবাইকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতে চাই। আর এখান থেকে যদি সমমনা মানুষদের একটি দল গড়ে ওঠে, সেটা নিশ্চয় ভালো কিছু হবে। আর তাই আমরা এখানে আসা পাঠকদের নিয়ে বইবিষয়ক আলোচনার জন্য একটা ফেসবুক গ্রুপও তৈরি করেছি। যেখানে তাঁরা বই নিয়ে সব রকম আলোচনা করতে পারবেন।’
বই পড়তে আসা এক পাঠক সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন। সবাইকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও উৎসাহিত করেন তিনি। শুধু ছাত্র কিংবা তরুণরাই নয়, এখানে আসেন সব বয়সের মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, তরুণ, বয়স্কদের আনাগোনা ছিল পুরোটা সময়। তাঁদের কেউ সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে বই নিয়ে রমনার বিশুদ্ধ বাতাস অনুভব করতে এসেছিলেন, অনেকে বই পড়তে চান, কিন্তু সময় করতে পারেন না, নিজেকে আবার উদ্বুদ্ধ করতে তেমন কেউ কেউও এসেছিলেন।
এখানে কেউ পড়ছেন বিভূতিভূষণ, কেউ সমরেশ, আবার কেউ পাওলো কোয়েলহো বা কলিন হুভার, কেউ কেউ আবার নিয়ে এসেছিলেন ইতিহাসের বই। নীরবে বই পড়ার এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক পাঠক বলেন, ‘কর্মব্যস্ততার চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম, আমার একসময় সপ্তাহে দুটো বই শেষ করার অভ্যাস ছিল। কাজের চাপে যেটা প্রায় হারিয়ে ফেলেছি। হঠাৎ রমনায় এই উদ্যোগ দেখে তাই ছুটে চলে এলাম।’
বই পড়ার এই দল আগামীকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় আবার যাবে রমনা পার্কে। চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন। দলটির সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে চাইলে ফেসবুকে ভলান্টিয়ার অপরচুনিটিজ পেজটির সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। সেখানে নিয়মিত আপডেট পাবেন।