‘ছোটবেলা থেকে সাদাত অঙ্কে খুব ভালো। ফাইনাল পরীক্ষা কখনো ১০০-র কম পায়নি।’ মায়ের এ বক্তব্য অবশ্য সাদাত মানতে চাইলেন না। দুদিকে মাথা নেড়ে বললেন, ‘না না, কখনো কখনো দু-এক নম্বর কম পেয়েছি।’ ছেলে যে কতটা মেধাবী, সেটা খুব আগ্রহ নিয়েই বললেন মা, ‘বুয়েটের ফল ঘোষণা করা হয় একটু দেরিতে। তত দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে গেছে। সেখানে সাদাতের অবস্থান ছিল ৩৪তম। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ ইউনিটে প্রথম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটে ১১তম এবং ঘ ইউনিটে ৪২তম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভর্তি পরীক্ষায় আমার ছেলে ৫ম হয়েছিল।’ সাদাত সঙ্গে যোগ করলেন, ‘বুয়েটে চান্স পেয়ে যাওয়ার পর আমি আর কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিইনি।’
অসুস্থতার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কারণে মনোবলে কোনো ঘাটতি ছিল কি না, জানতে চাইলে সাদাতের জবাব, ‘আমার বিশ্বাস ছিল, পরীক্ষায় যদি অ্যাটেন্ড করতে পারি, তাহলে খারাপ করব না। তা ছাড়া এইচএসসির রেজাল্ট নিয়ে আমি ভাবিনি। আমার মাথায় ছিল—বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্যতাটুকু অর্জন করতে পারলেই হলো।’
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সাদাত পার করেছেন তাঁর মাধ্যমিক। সে সময় থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন বিতর্কচর্চার সঙ্গে। অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত একটি রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে গিয়ে প্রথমবার বুয়েট ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলেন। তখনো জানতেন না, একদিন এই ক্যাম্পাসের সঙ্গে তাঁর একটা নিবিড় সম্পর্ক হয়ে যাবে। সাদাত মনে করেন, পড়ালেখার পাশাপাশি কোনো একটা সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত থাকা উচিত।
সবশেষে একটা সরল প্রশ্নই করে বসি সাদাত হোসেনের কাছে। ‘বুয়েটে প্রথম হতে কেমন লাগে?’ স্বল্পভাষী তরুণ হেসে বলেন, ‘আমার চারপাশে সবার আনন্দ দেখে ভালো লাগছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই প্রথম হওয়া না–হওয়ায় তো কিছু যায় আসে না। কেউ হয়তো প্রথম না হয়ে ১০০তম হয়েছে, সে-ও আমার সঙ্গে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলেই পড়বে। কেউ হয়তো বুয়েটে চান্স পায়নি, কিংবা পরীক্ষাই দেয়নি। তাতে কী যায় আসে? এটাই তো জীবনের শেষ নয়।’
সাদাতের ৫ পরামর্শ
বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় বুয়েটে যাঁরা প্রথম হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে স্বপ্ন নিয়েতে। সাদাত বললেন, স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আগ্রহ নিয়েই সেসব লেখা তিনি পড়েছেন। বড়দের পরামর্শগুলো তাঁর ভালো লেগেছে। কিন্তু সোজাসাপ্টাভাবে এ-ও বললেন, ‘পরামর্শ শুনতে ভালো লাগে, অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু বাস্তবে আসলে খুব একটা কাজে লাগে না। একেকজনের স্টাইল একেক রকম। নিজের চেষ্টাতেই শেষ পর্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যায়।’
তবু, এখন যারা স্কুলে পড়ছে কিংবা সামনে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি—
* সব বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
* বইয়ের কোনো অধ্যায় বা বিষয় বাদ দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে ইন্টারনেট বা অন্য কোনো সূত্র দেখতে হবে।
* উচ্চমাধ্যমিকের যেসব গাণিতিক সমস্যা রয়েছে, সেগুলো কম সময়ে কম জায়গার মধ্যে সমাধান করার অভ্যাস করতে হবে।
* প্রশ্ন কঠিন হলে সেটি সবার জন্যই কঠিন। এতে ঘাবড়ানো যাবে না। নিজের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
* ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতেই হবে—এ চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা অন্য সব পরীক্ষার মতোই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।