মূলত আইনি সেবা, বিশেষ করে নারীদের আইনি সেবা দিতে প্রায় দেড় বছর আগে থেকে কাজ শুরু করে অনলাইনভিত্তিক সংগঠন নারী অধিকার। এ গ্রুপের অ্যাডমিন আইনজীবী নুরজাহান কবির (নূপুর)। কর্মরত আছেন ঢাকা জজ কোর্টে। দুজন আইনজীবী বন্ধুকে নিয়ে ফেসবুকে এই পেজ খোলেন নুরজাহান কবির।
নুরজাহান পেশার শুরুটা করেছিলেন ক্রিমিনাল ল দিয়ে। সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর প্রথম সন্তান, পেটের মধ্যে সন্তান ঠিকমতো বাড়ছে কি না ইত্যাদি নিয়ে মানসিক চাপ ছিল প্রচুর। নুরজাহান বলেন, ‘মা ও শাশুড়ি পাশে ছিলেন। তারপরও যেসব মা বা হবু মায়েরা এই রকম সময় পার করছেন, তাঁদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করার তাগিদ থেকে তৈরি করি প্রেগনেন্সি জার্নি অ্যান্ড মাদারহুড গ্রুপ। সেই গ্রুপে এখন প্রায় ৫৪ হাজার নারী। মূলত এই গ্রুপই আমাকে নারী অধিকার পেজটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। প্রেগনেন্সি জার্নি অ্যান্ড মাদারহুড গ্রুপের অ্যাডমিন একজন আইনজীবী, এ কারণে সংসারের খুঁটিনাটি দুঃখ–কষ্টে নারীরা আমাকে খুদে বার্তা দিতেন। তখন চিন্তা করলাম একটা আইনি সহায়তার পেজ খুলি, অনেক নারী উপকৃত হবেন।’
বর্তমানে নুরজাহান নারী অধিকার পেজে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টা খুদে বার্তা পান। তালাক, সন্তানের দায়িত্ব, দেনমোহরসংক্রান্ত নানান সমস্যা। অনেকের কাছে সঠিক তথ্যও নেই। সমস্যা অনুযায়ী কাউন্সেলিং, আইনি পরামর্শ, উকিল নোটিশ পাঠানো এবং কিছু ক্ষেত্রে মামলা করা হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। ফেসবুকে সচেতনতামূলক ভিডিও বা লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে।
নারী অধিকার আইনি সহায়তা দিচ্ছে বিনা মূল্যে বা কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র খরচে। এই তরুণ আইনজীবীরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেবা দিচ্ছেন। ২১ জেলায় প্যানেল আইনজীবী জেলাভিত্তিক আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। প্রায় সব জেলাতেই আইনজীবী সমিতির সদস্যরা সেবা দিচ্ছেন।
নারী অধিকারের পেজটি ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক পোস্ট, যেমন ধর্ষণের শিকার হলে অবশ্যই করণীয় কাজ, দেনমোহর সম্পর্কে আইনগত তথ্য, জিডি কেন করবেন এবং করার নিয়মকানুন, স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে চাইলে সে–সম্পর্কিত আইনগত তথ্য ইত্যাদি। আবার বাবা–মায়ের ভরণপোষণ আদায়সহ অন্য অনেক বিষয়ে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন সংগঠনটির আইনজীবীরা। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। নুরজাহান বললেন, অনেক ক্ষেত্রে লিগ্যাল নোটিশ দিলে কাজ হয়ে যায়। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ উকিলের কাছ থেকে চিঠি গেলেই ভয় পেয়ে যান, ফলে তাড়াতাড়ি মীমাংসা করে ফেলেন বা প্রাপ্য অধিকারটুকু দিয়ে দেন। এই করোনার সময়ে আদালত বন্ধ থাকায় সেভাবে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে লিগ্যাল নোটিশ, গুরুতর সমস্যায় ৯৯৯ নম্বরে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে।
নুরজাহান কবির বললেন, ‘আগে প্রতি শুক্রবার টেলিভিশনে বাংলা সিনেমা হতো। সিনেমা দেখে ভাবতাম বড় হয়ে নায়িকা শাবানা ম্যাডামের মতো বড় আইনজীবী হব। বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব। তবে আমি ল নিয়ে পড়াশোনা করলাম। এলএলবি ও এলএলএম সনদ পেয়েছি, প্র্যাকটিস করছি, এখন মা–বাবাও খুশি।’
ভবিষ্যতে সংগঠনটিকে আরও বড় পরিসরে দেখতে চান নুরজাহান কবির। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে আরও সংগঠিত করতে চান, নারী অধিকারের নামে একটা চেম্বার নিয়ে অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান।