‘এই ছবিগুলো আমার জীবন। আমার প্রতিটা দিন। আমি জীবনের ৯৮টা বসন্ত পার করেছি। আর সেই জীবনকে ডায়েরির মতো করে এঁকেছি। আমার মনে হয়, মানুষের জীবন একটা আপেলের মতো। পৃথিবী নামের বাগানে মানুষ আপেলের মতোই একটা ফল।’ কথাগুলো চিত্রশিল্পী লুচিতা হুর্তাদোর। সম্প্রতি ৯৮ বছর বয়সে যাঁর আঁকা ছবির সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী হলো যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সার্পেন্টাইন স্যাকলার গ্যালারিতে। এটিই কোনো নারীর সবচেয়ে বেশি বয়সের প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীর স্টুডিও পরিচালক র্যায়ান গুডের মতে, ‘লুচিতা হুর্তাদো তাঁর জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছেন। তাই তাঁর প্রতিটি ছবি অন্যটা থেকে আলাদা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব ছবির মধ্যে একটা মিল আছে। আর তা হলো এসব ছবি বিশ্লেষণ করলে জানা যায়, মানুষ হিসেবে লুচিতা অত্যন্ত অনুভূতিশীল। মাটিতে পড়ে থাকা একটা পাখির পালকের জন্য তিনি যে মমতা দেখিয়েছেন, তা মানুষ ও শিল্পী—উভয় লুচিতাকেই অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছে।’
লুচিতা হুর্তাদো জন্মেছেন ১৯২০ সালের ২৮ অক্টোবর, ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে। দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে তিনি ছবিগুলো এঁকেছেন। রং–তুলিতে রাঙিয়েছেন তাঁর সমগ্র জীবন আর ভাবনা। আর তাই এই প্রদর্শনীর নাম দিয়েছেন ‘আমি জন্মাই, আমি মরে যাই, আমি পুনর্জন্ম নিই’।
১৯৪০–এর দশকে লুচিতা হুর্তাদোর আঁকা ছবি দেখে পরিবার ও আশপাশের সবাই কেমন যেন ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে যেতেন। একজন তো বলেই ফেললেন, ‘তুমি কি ভালো নেই? তোমার ছবির চরিত্ররা মাথা নিচু করে থাকে কেন? তাদের মন খারাপ কেন?’ তখন আসলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন নিয়ে বিষণ্নতায় ভুগতেন এই শিল্পী। তাঁর আঁকা ছবির একটা সিরিজের নাম ‘জন্ম’। লুচিতা হুর্তাদো জন ও ম্যাক নামের দুই সন্তানের মা। মাতৃত্বের অনুভূতি ফুটে উঠেছে তাঁর ছবিগুলোয়। সারা দিন মা, স্ত্রী বা দাদির দায়িত্ব পালনের পর দিন শেষে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, তখন লুচিতা হুর্তাদো শিল্পী হয়ে উঠতেন।
সূত্র: বিবিসি