ফজিলাতুন নেসা। পরিবারের সদস্যদের কাছে তিনি জ্যোৎস্না নামেই পরিচিত। ৭৩ বছরের বেশি বয়সী জ্যোৎস্না তাঁর সেলাইকর্ম দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মন জয় করেই চলেছেন। এই বয়সেও তাঁর হাত থেমে নেই। চিকিৎসকও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর চোখে যদি সমস্যা না হয়, তাহলে সেলাই করতে তো কোনো সমস্যা নেই।
রাজধানীতে ইন্দিরা রোডে ফজিলাতুন নেসার বাসায় গিয়ে দেখা গেল, তাঁর মেয়েরা সেলাইয়ের সুতা, কাপড়, সেলাই করা কাপড় সব যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছেন। বাসার ঘরের দেয়ালে কোনো ছবি দেখে মনে হবে, জীবন্ত পাখি গাছের ডালে বসে আছে। আর আলতা পায়ের সেই নারীকে দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না তিনি রক্ত–মাংসের কোনো মানবী নন। ‘খোকন খোকন ডাক পাড়ি...’, ‘আয় আয় চাঁদ মামা...’ অথবা ‘কে মেরেছে, কে বকেছে’ বাংলার এ ধরনের বিখ্যাত ছড়া কাপড়ে সুই–সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ফজিলাতুন নেসা।
১৯৪৬ সালে জন্ম ফজিলাতুন নেসার। তৎকালীন বরিশাল এবং বর্তমানের ঝালকাঠির রাজাপুর থানার গালুয়া গ্রামের মিয়া বাড়ির মেয়ে তিনি। এসএসসি পাস করতে পারেননি। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা তিনি। ছেলেমেয়ে সবাই দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। স্বামী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শামসুল হক গত বছর মারা গেছেন।
ফজিলাতুন নেসা হেসেই বললেন,‘সংসারের সব কাজ করেই কিন্তু আমি সেলাই করি। এখনো নিয়মিত সকালে ভোরে নামাজ শেষ করে চা খেয়ে একটু সেলাই করি। আবার বিকেলে, মাঝেমধ্যে রাতেও সেলাই করি। ওয়ালমেট, নাতি-নাতনির জামা কোনো কিছুই বাদ নেই। লন্ডনে ছেলের বাসায় চার বছর ছিলাম, তখনো সেলাই করেছি। তবে সব সেলাই নিজের কাছে রাখতে পারি না। যার যখন ভালো লাগে নিয়ে যায়। আমিও খুশি হয়েই দিয়ে দিই।’
ফজিলাতুন নেসার বড় মেয়ে কামরুন নাহার শারমীন বলেন, ‘মায়ের হাতের অসংখ্য সেলাই আছে। শুধু ওয়ালমেটই হবে ৫০টির বেশি। আর মা সংসারের সব কাজ সামলে সেলাই করেই যাচ্ছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর একাও হয়ে গেছেন অনেক। তাই আমরা নিষেধ করি না। ভাই লন্ডন থেকে মায়ের জন্য সুতা পাঠিয়ে দেন। আমরা ভাইবোনেরা মিলে মায়ের সেলাই নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার কথা চিন্তা করছি। নিজের মা বলে বলছি না, এত নিখুঁত সেলাই খুব কম মানুষই করতে পারে। মায়ের হাতের রান্নাও অতুলনীয়।’