বড় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষকের চাকরি করতেন মাহফুজা আক্তার। সন্তানের জন্মের পর চাকরিটা তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়। চাকরি ছাড়ার পর থেকেই নিজের পরিচয় নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন মাহফুজা আক্তার, এর মধ্যেই শুরু হলো করোনা। মাহফুজাকে অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পরামর্শ দিলেন স্বামী সাজ্জাদুর রহমান। কথাটা মাহফুজারও মনে ধরল। মৃৎশিল্প বা মাটির জিনিস তাঁর খুব ভালো লাগে। এটা নিয়েই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বলেন, ‘মৃৎশিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু না করলে বুঝতেই পারতাম না, মানুষের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ জিনিসের কদর এখনো এত বেশি।’
একসময় অন্যের প্রতিষ্ঠানের হিসাব রাখতেন মাহফুজা আক্তার। এখন নিজের ব্যবসার হিসাব রাখেন। বরিশাল থেকে মাটির তৈজসপত্র আনার মধ্য দিয়ে যে হিসাবের শুরু, অনলাইনে বিক্রির পর লাভ-ক্ষতির হিসাব দিয়ে তাঁর শেষ। মূলত মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করেন মাহফুজা আক্তার। ফেসবুককেন্দ্রিক তাঁর উদ্যোগের নাম ‘পল্লীনগর’। ২০২০ সালের মে মাসে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখন ব্যয় বাদে মাসে লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। শুধু দেশেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের বাঙালিদের খাবার টেবিলে পৌঁছে গেছে তাঁর পণ্য।
মাহফুজা জানান, ভালো জিনিস পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। মাটির তৈজসপত্র একটুতেই ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে। পণ্য প্যাকেজিং ও ডেলিভারি—প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সবচেয়ে সমস্যা হয় দেশের বাইরে পাঠানোর সময়, ভারী জিনিস বলে পাঠানোর খরচও অনেক বেশি।
বিদেশে পণ্য বিক্রি সম্পর্কে মাহফুজা বলেন, বেশির ভাগ সময় প্রবাসী বাঙালিরা দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে জিনিস কিনে রাখেন, পরে দেশে এসে ফেরার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান। অনেকে বিশেষ দিনে, বিশেষ কাউকে উপহার দেওয়ার জন্যও মাহফুজার পণ্য বেছে নিচ্ছেন। আপনজনদের চমকে দিতে বা পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতেও পণ্য কিনছেন অনেকে। পণ্য পাওয়ার পর পল্লীনগরের ফেসবুক পেজে ক্রেতাদের অনেকে অনুভূতিও প্রকাশ করেছেন।
মাহফুজা আরও বলেন, ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ থাকবে, তবে নিজের ব্যবসার আনন্দও আছে। ব্যবসার টাকা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই। তবে পরিবার পাশে না থাকলে একজন নারীর পক্ষে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা কঠিন।
বাগেরহাটে বড় হয়েছেন মাহফুজা। গ্রামের স্কুল থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি। তারপর খুলনা কমার্স কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান স্নাতক শেষে রাজধানীর ইডেন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেন মাহফুজা।
মাহফুজা স্বপ্ন দেখেন, খাবার টেবিল দখল করে নেবে মাটির সানকি, সরা, কলস, হাঁড়ি, পাতিল, জগ, মটকাসহ বিভিন্ন বাসন। কমবে প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার। আর এভাবেই নতুনভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বাংলার হারানো ঐতিহ্য।