অনুসন্ধানকারীর মেটাল ডিটেক্টরটা আচমকাই সংকেত দিল। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নের লেক বিয়েলের মাটির নিচের যে মূল্যবান ধাতু রয়েছে, তা-ই খুঁজছিলেন অনুসন্ধানকারী। যন্ত্র যখন আওয়াজ দিল, অনুমান করা যায় এখানে নিশ্চয় কিছু আছে। সম্ভাবনা সত্যি হলো, খুঁজে পাওয়া গেল হাতের মতো দেখতে একটি ধাতব বস্তু। দেখতে হাতের মতো হলেও আকৃতিতে একটু ছোট; কবজির অংশটা সোনার পাতে মোড়ানো। সেটা চলে গেল বার্নের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে। প্রত্নতত্ত্ববিদ আন্দ্রেয়া শায়ার বলেন, ‘এ রকম ভাস্কর্য আগে কখনো দেখা যায়নি। আমরা তাই নিশ্চিত ছিলাম না এটা আসল নাকি নকল।’ চলল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সোনার পাতে লাগানো প্রাকৃতিক আঠা পরীক্ষা করে আন্দাজ করা গেল, এটি যেনতেন কোনো হাতের ভাস্কর্য নয়, বয়স প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বছর! হয়তো ব্রোঞ্জ যুগের (৩০০০-১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) মাঝামাঝি সময়ের।
হাতে একটি গর্তের মতো রয়েছে, যেটি থেকে মনে করা হচ্ছে, এটি কোনো লাঠি বা দণ্ডের ওপর রাখা হতো। বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন এটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
এমন আবিষ্কারের পর প্রত্নতাত্ত্বিক দল কি আর বসে থাকতে পারে? ছুটে গেল সেই জায়গাটায়। যেখানে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ভাস্কর্যটি। চলল জোর অনুসন্ধান। টানা সাত সপ্তাহ ধরে খোঁজাখুঁজি করে দেখা গেল, মূল জায়গাটি আসলে একটি ভগ্নপ্রায় কবর। আর এই কবর থেকেই গুপ্তধন অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে পেয়েছিলেন সেই হাতের ভাস্কর্যটি।
তখন কবরটি খোঁড়া হলো। পাওয়া গেল একজন মধ্যবয়সী মানুষের হাড়গোড়, সঙ্গে লম্বা একটি ব্রোঞ্জের পিন আর ব্রোঞ্জের প্যাঁচানো বস্তু; যা সম্ভবত চুল বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হতো। এসবের সঙ্গে কিছু স্বর্ণের টুকরা আর ব্রোঞ্জের একটি ভাঙা আঙুলও পাওয়া গেল; যেগুলো আসলে সেই ভাস্কর্যেরই অংশ। যার মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা নিশ্চিত হয়েছেন, হাতের ভাস্কর্য আর মৃতদেহটি একই সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্লেষকেরা অবশ্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের নেশায় উন্মত্ত। তাঁরা জানিয়েছেন, ব্রোঞ্জ যুগের এ ধরনের ধাতব বস্তু বিরল। আর তখনকার কোনো বস্তুতে স্বর্ণের ব্যবহার তো এর আগে দেখা যায়নি বললেই চলে। তাই এই অনন্য আবিষ্কারটিকে নিয়ে আপাতত সুইজারল্যান্ডের বিয়েলে প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অবলম্বনে
ফাইজুন নাহার