আজ বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস

২০ সেকেন্ডে বাঁচবে বিশ্ব

আমাদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ। এবারের বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের প্রতিপাদ্য এমনই। করোনা মহামারিকালে এ তো একেবারেই সত্যকথন। হাত রাখতে হবে জীবাণুমুক্ত। এর বিকল্প নেই। এ জন্য দিনে ১০ বার বা নিদেনপক্ষে ৬ বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।

মনে রাখতে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান ভালো। সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যাবে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশু আর আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে। অ্যালকোহলভিত্তিক স্যানিটাইজার দাহ্য। তাই আগুন ধরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রশ্ন হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার কথা বলেছে, সেটা কেন? এর উত্তর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্ট্রারস ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বিশেষ ওয়েবসাইট ‘শো মি দ্য সায়েন্স’। এখানে ‘হাউ টু ওয়াশ ইয়োর হ্যান্ডস: হোয়াই টুয়েন্টি সেকেন্ডস’ নামে একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।


সহজভাবে বললে, সাবানের অণুর দুটি অংশ। একটি অংশ পানিকে আকর্ষণ করে। আরেকটি অংশ তেল, চর্বিকে। করোনাভাইরাসের চারপাশে থাকে প্রোটিন ও চর্বি। এই চর্বির অংশ আবার যেকোনো তেলের মতো। এই চর্বি করোনাভাইরাসকে যেকোনো কিছুর সঙ্গে আটকে থাকতে সাহায্য করে। সাবানের যে অংশ চর্বিকে টানে, সেটা যেভাবে কাপড় থেকে ময়লা উঠিয়ে পরিষ্কার করে, সেভাবেই হাতে আটকে থাকা জীবাণু পরিষ্কার করে।

পানির অপচয় রোধ করতে যতক্ষণ ধরে হাত ধুচ্ছেন, পানির কল বন্ধ রাখুন

একটা পরীক্ষা করতে পারেন। একটা পাত্রে পানি নিন। সেখানে একটু তেল ঢালুন। মিশে গেল? না। এই মিশ্রণে একটু তরল সাবান যোগ করুন। নাড়ুন। দেখবেন, চর্বি পানিতে মিশে গেছে। এভাবেই হাতের জীবাণুর ওপর কাজ করে সাবান। এরপর সেটা এরপর সেটা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়।

প্রথমে সাবানের যে অংশ চর্বিকে আকর্ষণ করে, সেটি চারপাশ থেকে করোনা জীবাণুর চর্বিকে ঘিরে ধরে। আক্রমণ করে। এরপর চর্বির অংশ প্রোটিন থেকে আলাদা হয়ে যায় সাবানের প্রভাবে। তারপর চর্বি ও প্রোটিন সাবানের ফেনার সঙ্গে মিশে যায়। এরপর যখন হাত ধুয়ে ফেলা হয়, তখন সেই পানির সঙ্গে জীবাণু ধুয়ে চলে যায়। হাতের প্রতিটা অংশে ঘষে ঘষে ধোয়ার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটতে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। তাই অনেকে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে পরামর্শ দেন।

২০ সেকেন্ড কীভাবে বুঝবেন


সুর করে গান—
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার ডব্লিউএইচও (চাইলে কোনো বন্ধুর নাম দিয়েও গাইতে পারেন)। ব্যস, গাইতে গাইতে পেরিয়ে যাবে ২০ সেকেন্ড।

হাত ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার বা লোশনজাতীয় কিছু লাগাতে পারেন। তাতে হাতের ত্বক রুক্ষ হবে না

কীভাবে হাত ধোবেন


ট্যাপের নিচে হাত দিয়ে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে হাত ভিজিয়ে নিন। কখনো বেসিনে বা অন্য পাত্রে জমানো পানিতে হাত ধোবেন না, অন্য কেউ ব্যবহার করলে তো অবশ্যই নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান নিয়ে ডলে ফেনা তুলুন। হাতের তালু, উল্টা পিঠ, আঙুলের ডগা ভালো করে ঘষুন। ট্যাপের পানির নিচে হাত নিয়ে আলতো করে হাত ধুয়ে ফেলুন হাত মুছে শুকিয়ে ফেলুন। পেপার টাওয়েল ব্যবহার সুবিধাজনক। কেননা, এতে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। বাইরে বেশি মানুষের সমাগম যেখানে, সেখানকার তোয়ালে পারতপক্ষে ব্যবহার করবেন না। যদি এয়ার ড্রায়ার থাকে, সেটি দিয়ে হাত শুকিয়ে নিতে পারেন।


কিছু পরামর্শ


* অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোবেন। পানি কুসুম গরম হলে আরও ভালো।
* পানির অপচয় রোধ করতে যতক্ষণ ধরে হাত ধুচ্ছেন, পানির কল বন্ধ রাখুন।
* টিস্যু দিয়ে ট্যাপ বন্ধ করুন।
* হাত ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার বা লোশনজাতীয় কিছু লাগাতে পারেন। তাতে হাতের ত্বক রুক্ষ হবে না।