‘হাসতে নাকি জানেনা কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোন না কত হাসির
খবর বলে যাই।’
কিংবা
‘হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহলাদী,
তিন জনেতে জটলা ক’রে ফোক্লা হাসির পাল্লা দি।’
বাংলা কবিতায় হাসির কত না বর্ণনা। ভদ্রতার হাসি, আলাপচারিতা শুরু বা শেষ করার হাসি, মায়ের মুখের হাসি, শিশুর অবুঝ হাসি কিংবা প্রেমময় এক চিলতে হাসি। জীবনে হাসির পশরা আসতে পারে, এমন নানান ধাপে। এক হাসিতে নাকি লঘু অপরাধও হাওয়া হয়ে যায় এক নিমেষে। সুন্দর হাসি কে না ভালোবাসে।
মনমরা থাকলে হাসিও প্রাণহীন দেখায় বৈকি। জীবনের সব ঝড়–ঝাপটা সহজভাবে সামলানোর মানসিকতা থাকা চাই। দৈনন্দিনতার বেড়াজালে মনটাকে বন্দী রেখে সারা দিনে নিজের সঙ্গে কী কী খারাপ হলো, তার হিসাব মনের ভেতর চললে হাসিটা সুন্দর হবে না, এ তো সাধারণের ধারণার বাইরে নয়। আবার সুন্দর–প্রাণবন্ত হাসির জন্য মন যেমন ভালো থাকা চাই, দাঁত-ঠোঁটের সুস্থতাও কিন্তু বিবেচনার বিষয়। বিশেষজ্ঞদের থেকে আজ জেনে নেওয়া যাক সুন্দর হাসির কিছু পূর্বশর্ত।
চাই সুস্থ দাঁত
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের ডেন্টাল সার্জারি ও অর্থোডন্টিকস বিভাগের পরামর্শক অধ্যাপক সুফিয়া নাসরীন জানালেন সুস্থ-সুন্দর দাঁতের রহস্য। প্রতিটি দাঁতের গঠন সুস্থ হতে হবে, প্রয়োজনে চিকিত্সা করাতে হবে। সুস্থ দাঁতের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মগুলো তো মেনে চলবেনই। প্রতিবেলা ব্রাশ করার আগে ফ্লসিং করুন। মিষ্টি খাবার খেলে কুলকুচির অভ্যাস করুন (শিশুদের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাশ করতে হবে)। শৈশবে নির্দিষ্ট সময়ে দাঁত পড়া ও পুনরায় ওঠা দাঁতের সঠিক বিন্যাস বিরাট নিয়ামক। অযত্নে দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত হলে আগেই পড়ে যেতে পারে। শিশুদের ৩-৪ মাস অন্তর দাঁতের চিকিত্সক দেখিয়ে আনুন। বড়দের জন্য ৬ মাস পরপর দেখালেই চলে।
সবার জন্য চাই নরম টুথব্রাশ। ২-৩ মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। ব্রিসল বাঁকা হয়ে গেলে তা ব্যবহার করবেন না। পান-সুপারি-জর্দা-সিগারেটের কারণে দাঁতে দাগ পড়তে পারে, ক্যানসারের জন্যও এগুলো দায়ী। পানিতে থাকা লৌহের কারণেও দাগ হয়। দাগ তোলারও ব্যবস্থা আছে দাঁতের চিকিত্সকের কাছে। তবে খুব ফরসা মানুষের দাঁত প্রাকৃতিকভাবেই সামান্য হলদে থাকে, তাদের ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে দাগ তোলা উচিত নয়।
দাঁত ও চোয়ালের সমস্যায়
শৈশবে দাঁত পড়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন কারণে যাঁদের দাঁত আঁকাবাঁকাভাবেই উঠেছে, তারা অর্থোডন্টিক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারে। উঠতি বয়সে বাঁকা দাঁতের জন্য অনেকের কাছে কথা শুনতে হতে পারে, যা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। দাঁতের সমস্যার জন্য কেউ কেউ হয়তো মুখ বন্ধ করে হাসার অভ্যাস রপ্ত করে নেয়, কারও সামনে মন খুলে হাসতেই ভুলে যায়। ওপর বা নিচের চোয়ালের কোনো সমস্যা থাকলে ৬-১২ বছরের মধ্যেই চিকিত্সা করানো ভালো। ওপরের দাঁত (একটি বা কয়েকটি) যদি নিচের দাঁতের ভেতর দিকে ঢোকানো থাকে, সেটির চিকিত্সা করানো ভালো ৮-১২ বছরের মধ্যে। এসব সমস্যার চিকিত্সা ১২ বছর বয়সের পর একটু জটিল হয়ে পড়ে।
গঠন বা বিন্যাসের বাদবাকি সমস্যার চিকিত্সা করানো হয় ১২ বছর বয়সের পর, তবে ২০ বছরের আগে করানো ভালো বলে জানালেন সুফিয়া নাসরীন। হাসলে কারও কারও মাড়ি দেখা যায়। এটির জন্যও অস্ত্রোপচার রয়েছে। মাড়িতে সংক্রমণ থাকলে দুর্গন্ধ হতে পারে, দাঁতের গোড়ায় পাথর জমলে হাসার সময় দেখা যেতে পারে। এগুলোর চিকিত্সা নিলে ঠিক হয়ে যাবে। একটি বা কয়েকটি দাঁত পড়ে গেলে বা ফেলে দেওয়া লাগলে সেটির স্থানে কিছু বসিয়ে (ইমপ্ল্যান্ট বা প্রস্থেসিস) নেওয়া যায়। চাইলে খোলা ও লাগানো যায়, এমন দাঁতও ব্যবহার করা যায়।
ভাঙা দাঁতের জোড়ার কথা, গোড়ার কথা
দাঁতের কোনো অংশ ভেঙে যেতে পারে দুর্ঘটনায়। পানি বা টুথপেস্টে অধিক মাত্রায় ফ্লোরাইডের কারণেও দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। দাঁতের ভাঙা স্থানে নিজের দাঁতের রঙের ফিলিং করানো যেতে পারে। রুট ক্যানাল করিয়ে স্থায়ী ক্যাপও পরিয়ে দেওয়া যায়। জীবাণুর সংক্রমণ থাকলে অবশ্য ক্যাপ পরানোটাই সমাধান। প্রতিরোধের জন্য ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট এড়িয়ে চলুন। এ দেশে পানিতেই ফ্লোরাইড থাকে বেশ। তাই টুথপেস্টে ফ্লোরাইড না থাকলেও সমস্যা নেই। জেল–জাতীয় (হালকা ধরনের) টুথপেস্ট ভালো। তবে শিশুদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সৌন্দর্যের কিছু কথা
রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের সঙ্গে কথা হলো ঠোঁটের সৌন্দর্য প্রসঙ্গে। ঠোঁট শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যায়। রুক্ষ ঠোঁটের চামড়া উঠে আসতে পারে। শীতের সময় এমন সমস্যা বেশি দেখা যায়। কেউ ঠোঁট রাঙাতে ভালোবাসেন, কেউ আবার তেমন নয়, প্রাণবন্ত সুস্থ হাসি সবার ঠোঁটেই সুন্দর। কারও কারও ঠোঁটের প্রান্ত খানিকটা নিচের দিকে নামানো দেখায়। তাঁরা সাধারণভাবে লিপস্টিক লাগালে তেমন ভালো লাগে না। তাঁরা ঠোঁট রাঙালে ওপরের ঠোঁটের প্রান্তের দিক একটু গোল করে এঁকে নিন (একদম কোণে সামান্য অংশ বাদ যাবে, দুদিকেই), আর নিচের ঠোঁটের দুই প্রান্ত থেকে টেনে মাঝের দিকে ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের মতো টেনে আনুন। এভাবে আঁকলে আপনি না হাসলেও মনে হবে আপনি বুঝি হাসিমুখেই আছেন।