লোহাগাড়া

হামলার আশঙ্কা, আতঙ্কে আ.লীগ নেতা-কর্মীরা

লোহাগাড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। হামলার ভয়ে অনেকে ঘরছাড়া। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর থেকে লোহাগাড়ায়ও সহিংসতা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর দিন ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে প্রথম হামলা হয় কলাউজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী ইসহাকের বাড়িতে। তখন বসতবাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাড়িতে ছিলেন না ইসহাক। এরপর থেকে তিনি এলাকাছাড়া। অবশেষে ২২ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে তিনি মামলা করেন।
গাজী ইসহাক বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ করার অপরাধে আমার বাড়িতে হামলা করেছে জামায়াতের লোকজন। এখনো আতঙ্কে আছি, আবার কখন হামলা হয়।’ ইসহাক ছাড়াও কলাউজানে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল জব্বার, মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নজরুল ইসলাম জানান, চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এখন এলাকায় থাকতে পারছেন না।
শুধু কলাউজান ইউনিয়ন নয়, চরম্বা, চুনতি, পদুয়া, পুটিবিলা, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীও এখন এলাকায় নেই। চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সহিদুল ইসলাম, যুবলীগের সদস্য এমদাদুল হক, ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু তাহের, ইউনিয়ন আ. লীগের সদস্য আহমদ উল্লার ওপর হামলা চালিয়েছে। বড়হাতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কে আছি।’
এদিকে পদুয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম চৌধুরীর পেট্রল পাম্পে ভাঙচুর ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চুনতিতে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আগুন দেন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সহিদুল হকের বাড়িতে। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইব্রাহীমের ও নলবনিয়া মনির আহমদের বাড়িতেও হামলা হয়। এ ব্যাপারে চুনতির আওয়ামী লীগ নেতা আনিস উল্লাহ জানান, ‘বিষয়টি জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। তাঁরা আপাতত ব্যক্তিগতভাবে সজাগ ও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।’
এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে পদুয়া, লোহাগাড়া বটতলী স্টেশনের শতাধিক দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বিমা কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর প্রতিবাদে ২০ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীরা বটতলী স্টেশনে সহিংসতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন।
লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘লোহাগাড়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। কারা এ হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের নাম পুলিশকে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’ জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাজাহান বলেন, রায় কার্যকরের পর সহিংসতার ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জামায়াত-শিবিরের ১৫০ জনকে সুনির্দিষ্ট ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে দেড় হাজার আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ২৫ জন। আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য ও সহযোগিতা পেলে এসব হামলা বন্ধ হয়ে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করে জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।