বেশির ভাগ মানুষেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার গতি ধীর হয়ে আসে। চেহারায় পড়তে শুরু করে বয়সের ছাপ। আবার কাউকে দেখলে মনে হয়, বয়স বাড়লেও যেন তারুণ্য রয়ে গেছে। তরুণ বয়সের মতোই জোরেসোরে পা ফেলেন, কাজে থাকে উদ্দীপনা। গবেষকেরা বলছেন, বয়স ৪০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মানুষের হাঁটার গতিই তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার হার বলে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন সাময়িকী গত বুধবার এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক একটি গবেষক দল চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তাঁরা বলেছেন, ধীরে হাঁটা মানুষের শরীরই কেবল দ্রুত বুড়িয়ে যায় না, তাঁদের চেহারায়ও বয়সের ছাপ পড়ে। এমনকি তাঁদের মস্তিষ্কের আকারও তুলনামূলক ছোট।
সাধারণত বয়স ৬৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নির্ণয়ে চিকিৎসকেরা হাঁটার গতি পর্যবেক্ষণ করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা মাংসপেশির শক্তি, ফুসফুসের কার্যকারিতা, শারীরিক ভারসাম্য, মেরুদণ্ডের শক্তি ও দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে ধারণা পান। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তারুণ্যের শেষ দিকে এবং মধ্য বয়সেও শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করা যায়। আন্তর্জাতিক ওই গবেষক দল এই কাজটিই করেছে। তারা নিউজিল্যান্ডে সত্তরের দশকে জন্ম নেওয়া এক হাজার মানুষের ওপর গবেষণাটি চালায়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ৪৫ বছর বয়সে বিভিন্ন মানুষের হাঁটার গতি বিভিন্ন হয়। এই বয়সে তাঁরা হাঁটার সর্বোচ্চ গতি পেয়েছেন সেকেন্ডে দুই মিটার। অর্থাৎ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারের কিছু বেশি। বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, ধীরে হাঁটা মানুষেরা শিশু বয়সে ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৩২ কিলোমিটার গতিতে হাঁটতে পারেন। এ ধরনের মানুষের বুদ্ধিমত্তাও কম হয়। এর বিপরীতে ৪০ বছর বয়সে যেসব ব্যক্তি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার গতিতে হাঁটেন, তাঁদের বুদ্ধিমত্তা তুলনামূলক বেশি।
গবেষকেরা বলেছেন, দ্রুত হাঁটা ব্যক্তিদের তুলনায় ধীরে হাঁটা ব্যক্তিদের ফুসফুস, দাঁত ও শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়। তাঁদের মস্তিষ্কও দ্রুত বুড়িয়ে যায়। সে দিক থেকে শিশু বয়সেই মানুষের পরবর্তী জীবন কেমন হবে, তার কিছুটা আঁচ করা যায় বলে ওই গবেষক দলের দাবি।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টেরি ই মফিট। তিনি বলেন, গবেষণায় তাঁরা জানতে পেরেছেন, শারীরিক ও মানসিক বয়সের সঙ্গে হাঁটার গতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। সে দিক থেকে বৃদ্ধ হওয়ার কয়েক দশক আগেই ধীরে হাঁটার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পায়।