কুশল সংবাদ

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে

মাথা ঘুরছে, বমি ভাব বা অস্বস্তি লাগছে—মেপে নিন আপনার রক্তচাপ৷ ছবি: অধুনা
মাথা ঘুরছে, বমি ভাব বা অস্বস্তি লাগছে—মেপে নিন আপনার রক্তচাপ৷ ছবি: অধুনা

১৭ মে, বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। শুধু এদিন নয়, যাঁরা সারা বছর এই সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য থাকল কিছু পরামর্শ।


কখন বুঝতে হবে রক্তচাপ বেশি আছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. এনামুল করিম জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কয়েক দিনের ব্যবধানে একাধিকবার রক্তচাপ মাপা উচিত৷ যদি সিস্টোলিক (ওপরেরটা) রক্তচাপ ১৪০ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক (নিচেরটা) রক্তচাপ ৯০ বা তার বেশি পাওয়া যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরা হয়।


অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়, যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বৈকল্য; তাহলে এসবের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা বা বমি ভাব হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ: ৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে কিডনির অসুখ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ৷ কিছু জন্মগত রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এবং কখনো কখনো গর্ভকালীন অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

কারা আছেন ঝুঁকিতে: স্থূলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ: উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপনের ধরনে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে, খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ পাতে লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা উচিত এবং এভাবে হাঁটা উচিত সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন।


ধূমপান করা যাবে না। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থাকলে তা কমাতে হবে। এ অভ্যাসগুলো যাঁরা এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হননি, তাঁদেরও থাকা উচিত। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা সত্ত্বেও তাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে তাঁকে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো।

ওষুধগুলো প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করতে হবে। ওষুধ সেবন করতে যেন ভুলে না যান, সে জন্য এমন জায়গায় রাখতে পারেন, যেন তা সহজেই চোখে পড়ে; যেমন খাবারের টেবিলের একদিকে রাখতে পারেন। হঠাৎ কোনো দিন যদি ভুলেই যান, তাহলে যখনই সেটির কথা মনে পড়বে; তখনই খেয়ে ফেলুন।


উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে তিনি প্রতি ছয় মাস অন্তর রক্তচাপ পরিমাপ করাবেন। আর যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে এক থেকে দেড় মাস অন্তর বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ


আর যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নন, তাঁদেরও রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে নিয়মিত। ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রত্যেকেরই উচিত প্রতি এক থেকে দুই বছর পর পর রক্তচাপ পরিমাপ করা৷ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কাছে রক্তচাপ পরিমাপ না করানোই ভালো।


হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে: সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাঁকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিয়ে আরাম পেতে পারেন। অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর মাধ্যমে রক্তচাপ কমে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। প্রয়োজনে তিনিই দেবেন ওষুধ। আর যাঁদের আগে থেকেই রক্তচাপ বেশি, তাঁদের হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলেও অস্থির না হয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মাথায় পানি বা বরফ দিয়ে সাময়িক উপশম হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে নিজে থেকে রক্তচাপ কমানোর জন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।


গ্রন্থনা: রাফিয়া আলম