পাঠকের ভালোবাসার গল্প

স্বাতীরও কি মাহিনকে ভালো লাগে?

ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। বাছাই একটি গল্প রইল এখানে।

ঘুম ভেঙে মাহিন দেখল, মাথার কাছের টেবিলের সামনে বসে কিছু একটা লিখছেন একজন নার্স।

বুকে ব্যথা নিয়ে গতকাল সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, এটুকু মনে আছে। রাত এগারোটার দিকে হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে মাহিনই সহকর্মী পরশকে ফোন করেছিল। পরশ কি এখনো হাসপাতালে আছে?

জিজ্ঞেস করতে নার্স জানাল, রাতে কারও থাকার দরকার পড়েনি। বেলা এগারোটায় ভিজিটিং আওয়ার। নিশ্চয়ই তখন কেউ আসবে।

কিছুক্ষণ পর মাহিনকে দেখতে এল কয়েকজন চিকিৎসক। তারা জানতে চাইল, বুকের ব্যথা আছে কি না। মাহিন হাসিমুখে উত্তর দিল। এক চিকিৎসক বলল, এ রকম হার্ট অ্যাটাকের পর অনেক জটিলতার শঙ্কা থাকে। আপনি সময়মতো হাসপাতালে এসেছিলেন বলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

চিকিৎসকেরা চলে গেলে ভাবনায় ডুব দিল মাহিন। টিউশন করেই চলছিল তার জীবন। সবে ব্যাংকের চাকরিটা হলো। বাবা নেই কত বছর। ভাইবোনও নেই। অসুস্থ মাকে নিয়েই তো কাটছিল দিন। আচ্ছা, মা কেমন আছে? মা কি জানে তার ছেলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

স্বাতী একবার মাহিনের মার দিকে তাকাল। তারপর নিঃসংকোচে কলমটা নিয়ে নিজের নাম লিখতে শুরু করল

নানা প্রশ্নে মন বিক্ষিপ্ত হতে লাগল। একটু গুছিয়ে নিয়ে সংসারটা পাতার কথা ভেবেছিল। সংসারের কথা মাথায় আসতেই স্বাতীর কথা মনে পড়ল। অফিসে তার পাশের ডেস্কে বসে স্বাতী। স্বাতীকে তার ভালো লাগে। কথাটা বলা হয়নি। আচ্ছা, স্বাতীরও কি তাকে ভালো লাগে?এমন সময় একজন নার্স এলেন ওষুধ খাইয়ে দিতে। ওষুধ খাওয়ার পর একটু ঘুম পেল। ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়েছে। মাহিনের সঙ্গে এখনো কেউ দেখা করতে আসেনি। রাতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর প্রায় সারা রাতই হাসপাতালে ছিল পরশ। ভোরের দিকে বাসায় ফিরে আবার তাকে অফিসেও যেতে হয়েছে।

সিসিইউতে দুজন মানুষকে দেখে মাহিন খুব অবাক হলো। স্বাতী আর তার মা। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে মাহিনের মাথায় একবার হাত রাখল মা। স্বাতী জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন আছ, মাহিন?

মাহিন জানাল এখন তার কোনো কষ্ট নেই।

কিছুক্ষণ পর তারা সিসিইউ থেকে বেরিয়ে এল। তখন চিকিৎসকের কক্ষে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। হঠাৎ স্বাতীর মোবাইল বেজে উঠল। অফিসের ম্যানেজার মারুফ স্যারের ফোন, ‘স্বাতী, চিকিৎসার খরচ নিয়ে মাহিন যেন কোনো চিন্তা না করে। চিকিৎসার পুরো খরচ সবাই মিলেই বহন করা হবে। পরশের কাছে জানলাম, ওর অ্যানজিওগ্রাম করতে হবে। হার্টের রক্তনালিতে রিং লাগানোর দরকার হতে পারে। মাহিনের মা কিছু বুঝে উঠতে পারবে না। চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপের পর তুমিই মতামত দিয়ো।’

স্বাতী হ্যাঁ-সূচক মাথা নেড়ে ফোনটা রাখল। একটু পর ওদের ডাক পড়ল। চিকিৎসক মাহিনের পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে সব বুঝিয়ে বলল। আজই অ্যানজিওগ্রাম করাতে হবে। একজন চিকিৎসা সহকারী একটা কাগজ তাদের সামনে এগিয়ে ধরে বলল, ম্যাডাম, এটা অ্যানজিওগ্রাম করার সম্মতিপত্র। এখানে আপনার নাম আর রোগীর সঙ্গে সম্পর্ক লিখে স্বাক্ষর করুন।

স্বাতী একবার মাহিনের মার দিকে তাকাল। তারপর নিঃসংকোচে কলমটা নিয়ে নিজের নাম লিখতে শুরু করল।