১৮তম জন্মদিন নিজের ঘনিষ্ঠ ছেলেবন্ধুর সঙ্গে বাইরে উদ্যাপন করতে গিয়েছিলেন ভারতের নেহা শারদ চৌধুরী। কিন্তু সেটি মেনে নিতে পারেনি নেহার পরিবার। ‘পরিবারের সম্মানহানি’ করায় সেদিন সন্ধ্যায়ই পরিবারের সদস্যরা মিলে পিটিয়ে হত্যা করেন নেহাকে।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুধু ভারত অথবা উপমহাদেশে নয়, পুরো বিশ্বেই পরিবারের সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যদের কাছে নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ জন নারী প্রাণ হারাচ্ছেন। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত সংস্থার (ইউএনওডিসি) সাম্প্রতিক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, নিজ ঘরই এখন নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা।
ইউএনওডিসির জরিপটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে যে ৮৭ হাজার নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাঁদের অর্ধেকেরও বেশি মারা গেছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার নারী মারা গেছেন স্বামী বা সঙ্গীর হাতে। ২০ হাজারের মতো নারী মারা গেছেন পরিবারের অন্য স্বজনদের হাতে।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বজনদের হাতে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি আফ্রিকা মহাদেশে, আর সবচেয়ে কম ইউরোপে। ইউরোপের ঠিক ওপরের জায়গাটিতে আছে এশিয়া। ২০১৭ সালের তালিকায় অবশ্য আফ্রিকা নয়, সবার ওপরে ছিল এশিয়াই। সে বছর পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার এশীয় নারী।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ছয়জন নারী তাঁদের পরিবারের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। ইউএনওডিসির নির্বাহী পরিচালক ইউরি ফেদোতভ বলেছেন, জেন্ডার অসমতা ও বৈষম্যের সর্বোচ্চ মূল্যটা চোকাতে হচ্ছে নারীদের। ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ও পরিবারের হাতেই প্রাণ হারাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি নারী।
তবে নারী হত্যাকাণ্ডের সব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। অনেক পরিবারই ঘটনাগুলো চেপে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলাও হয় না। যে কারণে গণমাধ্যমেও সব ঘটনা ঠিকভাবে উঠে আসে না। বিবিসির একটি দল জরিপ করে দেখেছে, চলতি বছরের ১ অক্টোবর ৪৭ জন নারীকে হত্যার খবর পুরো গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা যে আরও বেশি, সেটিই উঠে এল বিবিসির মনিটরিং দলের সদস্য মরিয়ম আজওয়ারের কথায়, যতগুলো হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে এসেছে, হয়তো এর চেয়ে বেশিসংখ্যক নারীর হত্যার কথা কেউ জানেই না। অনেক ঘটনা কখনো গণমাধ্যম পর্যন্ত পৌঁছায় না, কেউ জানতেও পারে না বিধায় তদন্তও হয় না।
সূত্র: বিবিসি