পুজোর ছুটিতে দীপালি বাবা-মার সঙ্গে গেল গ্রামের বাড়ি। বাড়ির পেছনে কাকচক্ষুজল পুকুর। তাতে ডুব দিয়ে স্নান করতে ভালোই লাগে দীপালির। কিন্তু ফিরে আসার দিন ভোরে ডুব দেওয়ার সময় খানিকটা জল ঢুকে যায় তার বাম কানে। সেই থেকে কান ভারী ভারী ভাব, বদ্ধ একটা অনুভূতি আর কানে কম শুনতে পাচ্ছে দীপালি। যে পাশে জল ঢুকেছে মাথা সেদিকে কাত করে লাফিয়ে, ঝাঁকিয়ে, কানে কটন বাড দিয়ে শত চেষ্টা করেও এই উদ্ভট পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলল না তার। কাঁচুমাচু হয়ে বাবা-মাকে জানাল সে। সেদিন সন্ধ্যায় ডাক্তারের চেম্বারে নেওয়া হল তাকে।
কানের ভেতর আলো ফেলে পরীক্ষা করে দেখা গেল কানের জমে থাকা খৈল, স্নানের সময় ব্যবহার করা সাবান/শ্যাম্পুর ফেনা ইত্যাদি পুকুরের পানির সঙ্গে মিলে কানের ভেতরে ঠেঁসে রয়েছে। কানের পর্দা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আঙুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করার ফলে সবটুকু ময়লা পর্দার কাছাকাছি চলে গিয়েছে, কানের সরু ছিদ্রপথ নখের আঁচড়ে খানিকটা ক্ষতও হয়ে গিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রথমত কানে ভারী ভারী ভাব হয়, শ্রবণশক্তি কমে যায়, কান থেকে তৈলাক্ত পদার্থ বের হতে পারে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাও হতে পারে।
কানের এ রকম অবস্থার চিকিৎসা খুবই সহজ—সাকশান মেশিনের মাধ্যমে কানের জমে থাকা ময়লাগুলো বের করে নেওয়া। এ কাজের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। এ রকম অবস্থায় এটা-ওটা দিয়ে কান খোঁচাবেন না। তাতে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
স্নান করার পর দীপালির মতো আমাদের অনেকেরই কান ভারী হয়। কান ভারী হওয়া আমাদের জন্য খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। এটিকে আমরা খুব সাধারণ ব্যাপার মনে করে পাত্তা দিই না খুব একটা। কিন্তু এই পাত্তা না দেওয়া আপনার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রসঙ্গত এখানে জানিয়ে রাখা যাক কী কী কারণে আমাদের কানে ভারী ভারী লাগা, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, কান থেকে অল্প অল্প ময়লা বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
কেন সমস্যা দেখা দেয়
• ময়লা, খৈল, মরা চামড়া ইত্যাদির জন্য কানের ছিদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে
• কোনো কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে
• কানের পর্দা অক্ষত থাকার পরও কানের ভেতরকার হাড়ের স্থানচ্যুতি হলে
• কানের ভেতরকার হাড়ের সংযোগস্থল শক্ত হয়ে গেলে
• মধ্যকর্ণের রোগ থাকলে/হলে।
এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার হতে পারে।
যেভাবে কানের এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়
• কানের ছিদ্রপথে ময়লা, খৈল, পানি বা পুঁজ জমে থাকলে তা বের করে আনা হয়
• ফেটে যাওয়া পর্দার ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে পর্দা লাগিয়ে নেওয়া
• হাড়ের সংযোগ শক্ত হয়ে গেলে অপারেশনের মাধ্যমে তা ঠিক করে নেওয়া
• মধ্যকর্ণের কোনো সংক্রমণ থাকলে তার চিকিৎসা
• সবকিছুর পরও শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক করা না গেলে হিয়ারিং এইডের ব্যবস্থা করা।
কান অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। অন্যের কথা শুনে বাড়িতে অনভিজ্ঞ হাতে নিজেই কানের কোনো চিকিৎসা করবেন না। আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত কানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাঁর পরামর্শ মতো চিকিৎসা করান।
লেখক: এমবিবিএস, ডিএলও ট্রেইনি (নাক-কান-গলা বিভাগ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।