রাত তখন প্রায় ১২টা। এক দম্পতির ছবি স্কেচ করছেন। কদিন আগে অর্ডার পেয়ে এই কাজটা শুরু করেছেন সুমাইয়া তানজিদ। ছেলেবেলা থেকে মনের অজান্তে এঁকে ফেলতেন মানুষের চোখমুখের ছবি। দেখা গেল ক্লাস চলছে; কিন্তু সুমাইয়া মন পড়ে আছে সাদা কাগজের দিকে। পেনসিল বা কলম দিয়ে আঁকছে একটা পর একটা ছবি। মা–বাবা বিষয়টা জানলেও মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো ছিলেন না। এভাবে স্কুল পেরিয়ে কলেজ। রং তুলি দিয়ে ফ্রেমের মধ্যে রঙিন ছবি আঁকতে শুরু করলেন, কিন্তু জুতসই হচ্ছিল না। ধরলেন পেনসিল। আঁকতে শুরু করলেন মানুষের ছবি।
সুমাইয়া ঢাকার হলিক্রস কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে। ঢাকার জন্য মন খারাপ হতো। সময় কাটানোর জন্য ফেসবুকে খুলে ফেলেন একটি পেজ। নাম দিলেন ‘আর্ট শপ’। নিজের দু–একটা আঁকা ছবি দিয়ে পোস্ট শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকে। ‘মেধাকে কখনো বিনা মূল্যে বিক্রয় করতে হয় না’—এই বাক্যটা কোথায় যেন সুমাইয়া দেখেছিলেন। তাই ফেসবুক পেজে মানুষের ছবি এঁকে দেওয়ার জন্য প্রতি ছবির মূল্য ৩৫০ টাকা নেবেন বলে ঘোষণা দিলেন। শুরুতে সাড়া কম। কিন্তু দমে গেলেন না।
একদিন একজনের একটা ছবির আঁকার কাজ পেলেন। আঁকার পর ছবিটি পাঠানো হলে ক্রেতার ততটা ভালো লাগেনি। জানিয়ে দিলেন ছবিটি তিনি নেবেন না।
তবে এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে আবার অর্ডার পেলেন। ক্রেতাকে বললেন আগে টাকা পরিশোধ করার জন্য। এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ছবি তিনি এঁকে বিক্রি করেছেন। প্রতি মাসে আয় দিয়ে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেন। এখন আর স্বল্প দামে ছবি বিক্রি করেন না।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের বিস্তারে ক্যাম্পাস বন্ধ। তবে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে সপ্তম সেমিস্টারে পড়ুয়া সুমাইয়ার ব্যস্ততায় কাটছে দিন। পড়াশোনা শেষ করে স্বনির্ভরশীল শিল্পী হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তিনি। বেশ কয়েকটা আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও পেয়েছেন। ক্রিয়েটিভ বাংলা অনলাইন আর্ট প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান। সুমাইয়া কারও কাছ থেকে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ নেননি। মনে খেয়ালে, নিজের একান্ত চেষ্টায় দিন দিন শিল্পী হয়ে উঠছেন তিনি।
সুমাইয়া বললেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ভালো লাগা কাজগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকে মনে করেন, পড়াশোনার পর ভালো চাকরি পাওয়াটাই বড় কথা। এই চিন্তা থেকে বের হতে হবে। যিনি যে কাজে দক্ষ, তাঁকে সেই কাজে লাগাতে পারলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।’