সারা পৃথিবীর মানুষ কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বিধিনিষেধের মধ্যে চলছে জীবন। তবে নতুন স্বাভাবিক জীবন আস্তে আস্তে যাপন করতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। এই আপনাকে সাহায্য করবে মাস্ক, পিপিই ও স্যানিটাইজার। বাজার ঘুরে করোনাকালে প্রয়োজনীয় এ তিন উপকরণে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
মাস্ক
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বেশি চাহিদা মাস্কের। সচেতন নাগরিক হিসেবে সারা দেশে সবাই এখন মাস্ক ব্যবহার করছে। রাস্তায়, ফুটপাতে, বিভিন্ন অনলাইন শপে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সারা দেশের ফার্মেসি ও সার্জিক্যাল স্টোরগুলোতে মাস্ক পাওয়া যায়।
সাধারণত চীন বা জাপান থেকে বাংলাদেশে মাস্ক আসে। বর্তমানে দেশীয় কাপড়ের মাস্কের চাহিদাও রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মেসিতে ডিসপোজিবল নন–ওভেন ফ্যাব্রিক মাস্কের দাম ২৫ টাকা। সুতির মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, স্পঞ্জ অ্যান্টিডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এন-৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, এন-৯৫ (৮১১০ এস) ১৮০ টাকা, পিএম-২.৫ মাউথ মাস্ক ১২০ টাকা। চীন থেকে শাওমি ব্র্যান্ডের যে মাস্ক আনা হচ্ছে, সেগুলোর দাম যথাক্রমে এয়ারপপ থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যান্টিফগ মাস্ক ৩৫০ টাকা, স্মার্টলি ফিল্টার মাস্ক ৪৫০ টাকা, শাওমি পিএম-২.৫ লাইট ওয়েট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়।
অনলাইন মাস্কজেনের স্বত্বাধিকারীর তামান্না হক জানান, ‘বাজারে বা ফুটপাতে মাস্কের চাহিদাই বেশি। আমাদের অনলাইন শপে স্টাইলিশ ও কাপড়ের তৈরি মাস্ক পাওয়া যায়। এগুলো সুতি কাপড়ের হওয়ার কারণে ব্যবহার আরামদায়ক।’
ফ্যাশন হাউস ইয়োলোতে বিক্রি হচ্ছে ফ্যাশনেবল মাস্ক। প্রতিষ্ঠানটির গুলশান শাখার বিক্রয় ব্যবস্থাপক জানান, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ সবচেয়ে বেশি কিনছে মাস্ক। ৭০ ও ১২৫ টাকার দুই ধরনের মাস্ক তাদের শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সারা লাইফস্টাইল নিয়ে এসেছে কাপড়ের তৈরি মাস্ক। এগুলো বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটি মাস্কের মূল্য ৫০ টাকা।
শাহবাগ মেডিকেল কর্নারের বিক্রেতা সুমন বলেন, ৫০টি মাস্কের বক্সের দাম এখন ৫০০ টাকা। ফিল্টার মাস্ক ৭০ টাকা। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউস ও অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দাম ও মানের মাস্ক।
পিপিই
কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো জায়গায় কাজ করেন যেখানে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে তাঁর জন্য পিপিই আবশ্যক। কারণ, এ ক্ষেত্রে শুধু তিনিই সংক্রমিত হবেন না, তাঁর মাধ্যমে আরও অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) অনেক ধরনের হতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে কী ধরনের কাজে তা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটার ওপর। চিকিৎসকদের জন্য পিপিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সাধারণ অনেক মানুষও বর্তমানে পিপিই পরছে। দেশের বাজারে বিভিন্ন মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে। এ পিপিইগুলোর দাম যত বেশি মান তত ভালো।
ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সাধারণ মানুষও পিপিই বেশি কিনছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানের পিপিইর দাম ২৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। একটু উন্নত মানের পিপিইর দাম এক হাজার টাকা থেকে শুরু।
ফ্যাশন হাউস সারা করোনাকালের শুরু থেকেই পিপিই বিক্রি করছে। সারা প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে পিপিইতে। সারা ফ্যাশন হাউসের সহকারী পরিচালক তারিকুল ইসলাম জানান, সারার পিপিই টাফেটা কাপড়ের ওপর পিইউ কোটিং করা। পুরো পিপিই সিম টেপ দিয়ে সিলিং করা, যা শতভাগ পানি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সারার পিপিই ৮৮০ টাকা। জুতার কাভারসহ দাম পড়বে ৯৯০ টাকা। দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দাম ও মানের পিপিই।
স্যানিটাইজার
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে কদর বেড়েছে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। মানুষের চাহিদা মেটাতে করোনাকালে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি নতুনভাবে স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেসার্স এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হ্যান্ডিরাব সলিউশন ৫০ মিলিলিটার ৪০ টাকায়, ১০০ মিলিলিটার ৫২ টাকায় এবং ২০০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ১০০ টাকায়। মেসার্স অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এসিআই) হেক্সাসল হ্যান্ডরাব (ডিসপেনসারসহ) ৫০০ মিলিলিটার ২১৫ টাকা ৬৫ পয়সায় এবং ২৫০ মিলিমিটার বিক্রি করবে ১৪০ টাকা ৪২ পয়সায়। হেক্সাসল হ্যান্ডরাব ২৫০ মিলিলিটার (বোতল) বিক্রি করবে ১৩০ টাকা ৩৯ পয়সায়, ৫০০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ১৯৬ টাকা ৩৩ পয়সায়, ৫০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ৪০ টাকা ১২ পয়সা। ক্লিনজেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ১০ টাকা ও ৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ১০০ টাকায়। মেসার্স ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড স্যানিস্ক্রাব স্কিন ক্লিনজার ২৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ৩০০ টাকায়, স্যানিককর্ড জেল ৬ গ্রামের টিউব বিক্রি করবে ৫০ টাকায়, স্যানিটাইজার হ্যান্ডরাব ২৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ১৩০ টাকায়, ৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ৪০ টাকায়। মেসার্স জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হ্যান্ডিওয়াশ সলিউশন ৫০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ৪০ টাকায় আর ২৫০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ১৩০ টাকায়।
মেসার্স গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হ্যান্ডস্কাব ২৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ২৫০ টাকায়, হ্যান্ডিসোল ২৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ১৩০ টাকায়, ১২৫ মিলিলিটার বিক্রি করবে ৭০ টাকায় ও ৫০ মিলিলিটার বিক্রি করবে ৪০ টাকায়।
মেসার্স স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড জারমিসল হ্যান্ডরাব (পাম্প, ডিসপেনসারসহ) ২০০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ১৪০ টাকা ৪২ পয়সা, জারমিসল হ্যান্ডরাব (ওয়াসারসহ) ২০০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ১৩০ টাকা ৩৯ পয়সায় ও জারমিসল হ্যান্ডরাব ৫০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ৪০ টাকায়।
মেসার্স অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কেভিরাব হ্যান্ডরাব ৫০ মিলিলিটার বোতল বিক্রি করবে ৪০ টাকায়, ২৫০ মিলিলিটার বোতল ১০৫ টাকা ৭২ পয়সায় ও ৫০ মিলিলিটার বোতল ৩১ টাকা ২২ পয়সায়।