ভোরবেলায় বাজারের ব্যাগ হাতে, পায়ে চটিজুতা পরে বাজারের উদ্দেশে বেরোচ্ছেন বাবা, এমন স্মৃতি আমাদের অনেকেরই আছে। কেননা, টাটকা শাকসবজি, ফল, মাছ, মাংস কেনার জন্য ভোরে বাজার করার কোনো বিকল্প নেই। ভোরে বাজারে যাওয়ার সঙ্গে ‘টাটকা বাজার’ পাওয়ার একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক ছিল। এখন সে সমীকরণ বদলে গেছে। বিশেষ করে নাগরিক জীবনযাপনে এখন অনেকেই কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে বাজার করেন। সেই বাজার কেবল কাঁচাবাজার নয়, তার ভেতরে যাবতীয় কেনাকাটাই পড়ে।
যানজট আর নাগরিক ব্যস্ততায় এক ছাদের নিচেই সব পেয়ে যাওয়া একটি দুর্দান্ত সুরাহা। আর সেই সমাধানের নাম সুপারশপ। এখন ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ স্বপ্ন, আগোরা, ইউনিমার্ট, ফ্যামিলিমার্ট, ট্রাস্টমার্ট, মীনাবাজার, প্রিন্স বাজার, সিএসডি, ডেইলি শপিং, আলমাস, ল্যাভেন্ডারের মতো কিছু না কিছু আপনি পেয়েই যাবেন। নিদেনপক্ষে পাড়াতো সুপারশপ তো আছেই।
সুপারশপ মানে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা বৈচিত্র্যময় পণ্যের বাজারের যৌথ পরিবার। এক ছাদের নিচে যেখানে পাওয়া যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব উপকরণ। কাঁচাবাজার, মাছ, মাংস ছাড়াও পাবেন সব ধরনের চাল, ডাল, আদা, রসুন, পেঁয়াজ। পাবেন থানকুনি পাতা, চুইঝাল, মাংসের কিমা, নানা রকম রুটি, বিস্কুট, জুস, আচার, চুড়ি, ফিতা, জামাকাপড়, জুতা, মেকআপ, বেডশিট, কুশন, প্লেট, বাটি, ওভেনসহ অনেক কিছু।
এমন অনেক জিনিস আছে, যা সচরাচর সবখানে মেলে না, কিন্তু সুপারশপে ঢুঁ দিয়ে ঠিকই দেখা পেয়ে যেতে পারেন। যেমন কলার মোচা, থোড়, আতা ফল, কাউনের চাল বা বিন্নি ধানের চাল। কী নেই! মিলবে দেশি-বিদেশি তাজা ফলমূল, শুকনা ফল, মুদিদোকানের উপকরণ, ফ্যাশন হাউসের মতো পোশাক, গয়না, জুতা, ব্যাগ, জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, ইলেকট্রনিক পণ্য, স্টেশনারি পণ্য, শিশুদের খেলনাসহ দৈনন্দিন আরও অনেক কিছু। সেখান থেকে কেবল নিজের পছন্দমতো পণ্য বেছে নিলেই হলো।
এই তো সেদিন নওরিন আহমেদ সুপারশপে ঢুঁ দিলেন শ্যাম্পু আর কেক কিনবেন বলে। শ্যাম্পুর দিকে হাত বাড়াতেই চোখ পড়ল টুথপেস্টের ওপর। আর মনে পড়ে গেল টুথপেস্টও শেষের দিকে! ফেরার সময় এক কেজি আলু আর একটা নতুন লিপপেনসিল নিতেও ভুল করলেন না। শমিকার গল্পটাও অনেকটা সেরকমই। এই গরমে টিউশন থেকে ফেরার সময় একটু ঠান্ডা হতে আর নতুন কী কী এল সেই খোঁজ নিতে নিয়মিত ঢুঁ দেন ঘরের কাছের সুপারশপে। যখন যেগুলোতে ছাড় চলে, তখন সেগুলোর দিকেই হাত বাড়ান। এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে ব্যবহার্য জিনিসপত্র কেনাকাটা করায় অর্থ বা সময়—কোনটার ওপরেই কখনোই বিশেষ চাপ পড়ে না।
নগরজীবনে বাজার করার সহজ সমাধান হিসেবে ক্রমশ উচ্চবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তদের থেকে মধ্যবিত্তদেরও নিয়মিত যাওয়া–আসার জায়গা হয়ে উঠছে সুপারশপ। আধুনিক বাজার! মাছ থেকে মিষ্টি, চাল থেকে চুলা—সবই মেলে এখানে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সময় নিয়ে বেছে বেছে কেনাকাটা করা যায় বলে দিন দিন এর জনপ্রিয়তার পারদ কেবল ওপরের দিকে উঠছে। বিশেষ করে মহামারিকালের চলে যাওয়া দুই বছরে সুপারশপ যে সেবা দিয়েছে, তা মানুষের মনে ঠাঁই করে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিধিনিষেধের প্রায় পুরোটা সময় তারা চালু রেখেছিল হোম সার্ভিস।
এ ছাড়া কার্ডে বিল পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় টাকা বহন করার ঝুঁকি থাকে না। একেক চেইন সুপারশপে একেক কার্ডে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। রয়েছে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও। মেম্বারশিপ কার্ড থাকলে পাবেন নানা ছাড় আর সুযোগ–সুবিধা। সব মিলিয়ে শহুরে আবহে ‘সুপারশপে সুপারশপিং’ করার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠছে বেশ জোরেশোরে।
অনলাইনে সহজ জীবন
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনলাইন কেনাকাটা। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে মুদিপণ্য বিক্রি করে। মহামারিকালে এসব অনলাইন প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। চাল, মাংস, ডাল, ডিম সবই কেনা যাবে ক্লিক করে। সুপারশপের মতো সরাসরি গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনলাইনে কেনাকাটা সময় আরও বাঁচিয়ে দিয়েছে। অফিসের চলতি পথে রাস্তায় বসেও প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে পারছেন যে কেউ। আপনি বাসায় আসার আগেই আপনার ফরমাশ করা লেবু, ধনেপাতা থেকে শুরু করে মাছ, মাংস সবই বাসার দরজায় চলে আসবে মুঠোফোনের এক ক্লিকে। করোনাকালের দুঃসময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ মানুষের দোরগোড়ায় সরবরাহ করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পান্ডা মার্ট, চালডাল, স্বপ্ন, আগোরা, নিত্যবাজার, অনলাইন শপ বিডি, গ্রিন গ্রোসারি, অনলাইন মুদি, বাজারওয়ালা, ঘরে বাজার, বাজার নিন, হাটবাজার, মীনাবাজারসহ বহু অনলাইন মুদিদোকান আছে। সহজ হওয়ায় অনেকেই মহামারিকালের সেই অভ্যাসটা আর বদলাতে চাননি। ঈদের জন্যও অনেক কেনাকাটা থাকে। শহরের জ্যাম ঠেলে, ধুলাবালু মেখে এই বাজারের তেল আর ওই বাজারের পেঁয়াজ কেনার বদলে তাই অনলাইনে সারতে পারেন ঈদবাজার। কোনো ঝামেলা ছাড়াই পৌঁছে যাবে ঘরের দরজায়।