অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার আগে মারুফা সুমির সুপার শপে যাওয়া ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস। আর সুপার শপে গেলে তো আর খালি হাতে ফেরা হয় না। পছন্দ ও প্রয়োজনীয় এটা-ওটা কিনেই বাসায় ফিরতেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে মারুফা সুমি সুপার শপে যাওয়া বন্ধ করে দেন। প্রয়োজনেও যেতেন না তিনি।
ইদানীং আবার প্রতিদিন মারুফা সুমি যাচ্ছেন সুপার শপে। আবার চালু করার কারণ কী? শুনি মারুফা সুমির থেকেই। বললেন, ‘সুপার শপে প্রতি মুহূর্তেই সমাগম হয় শত শত মানুষের। সুপার শপগুলোতে বাজার বহন করার জন্য যে ট্রলি ব্যবহার করা হয়, তাতে মানুষের স্পর্শ লাগে। হাতে ভাইরাসের জীবাণু থাকে। সেই জীবাণু বাজার করতে আসা অন্য লোকের হাতে চলে যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তাই সেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনাও এখন অনেক বেশি। তাই দেশে করোনাভাইরাসের দেখা দেওয়ার পর থেকে সুপার শপে যাওয়া বন্ধ করে দিই।’
মারুফা সুমি আরও বলেন, ‘সুপার শপে বাজার বহন করার ট্রলিগুলো জীবাণুমুক্ত করতে সেপনিল স্কয়ার নিয়ে এসেছে ডিসইনফেকট্যান্ট কিট। এখন প্রতিবার ট্রলি ব্যবহারের আগে যে কেউ ডিসইনফেকট্যান্ট কিট সোয়াইপ করলে ট্রলির হাতল জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। তাই এখন আর ট্রলি থেকে সংক্রামিত হওয়ার সুযোগ নেই।’ মারুফা সুমির যুক্তিযুক্ত উত্তর।
নিউ নরমাল লাইফে সহায়ক
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আতঙ্কিত সারা বিশ্বের মানুষ। চীন থেকে শুরু হওয়া এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষের সচেতনতার কমতি নেই। বাংলাদেশে প্রায় তিন মাস অফিস-আদালত, পরিবহন, রেস্তোরাঁসহ প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল। থেমে ছিল গাড়ি আর কলকারখানার চাকা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অর্থনীতির চাকাও। কিন্তু এই ভাইরাস তো সহজে যাচ্ছে না। তাই জীবনযাপনের জন্য শুরু করতে হয়েছে ‘নিউ নরমাল’ লাইফ। আর নিউ নরমাল লাইফে সেপনিল সাহায্য করছে মানুষকে।
থাকুন দুশ্চিন্তামুক্ত
কোটি মানুষের এ শহরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুপার শপগুলো। প্রতিটি এলাকাতেই গড়ে উঠেছে এক ট্রলিতে সংসারে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ কেনার সুবিধাসংবলিত শীতল এ সুপার শপগুলো। করোনাকালেও সুপার শপ থেকে জিনিস কেনার পরিমাণ কমেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বেশি বেশি হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে। করোনার সংক্রমণ থেকে নিশ্চিন্ত থাকতেই সুপারশপের ট্রলি জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্কয়ার টয়লেট্রিজ বাজারে নিয়ে এসেছে ডিসইনফেকট্যান্ট কিট। গোলাকার এ পণ্যটি ট্রলিকে জীবাণুমুক্ত করে সুপারশপে বাজার করার কাজটি সহজ করবে।
থাকুন জীবাণুমুক্ত
গুলশানের একটি সুপার শপ থেকে নিয়মিত বাজার করেন ব্যাংকার আহসান হাবিব। করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে পরিবার ও নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে যাচ্ছেন তিনি। সুপার শপে প্রবেশ করে ট্রলি ব্যবহার করার আগে একটা অজানা আতঙ্কে থাকতেন আহসান হাবিব। ‘বাজার করার জন্য যখন ট্রলি নিতাম, তখন মনে হতো এই বুঝি আমার হাতে করোনাভাইরাসের জীবাণু লেগে যাচ্ছে। কারণ হাত থেকে মুখ বা নাক দিয়ে শরীরে মধ্যে চলে যায় ভাইরাসটি। অনেকে সময় বাজার করতে করতে নিজের অজান্তে হাত ও নাক স্পর্শ করতাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি ট্রলিগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য ডিসইনফেকট্যান্ট কিট ব্যবহার করছে।’ এতে আপনি কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন? জানতে চাইলে আহসান হাবিব জানান, ‘যেহেতু ট্রলির সঙ্গেই গোলাকার কিট লাগানো রয়েছে, তাই একজনের বাজার শেষ হয়ে গেলে নতুন যিনি বাজার করতে ট্রলি ব্যবহার করবেন, তিনি নিজেই সেপনিল দিয়ে ট্রলিটি জীবাণুমুক্ত করতে পারবেন। টিপ দিয়ে ধরে রেখে একবার ট্রলির হাতলের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে গেলেই নিমেষেই জীবাণুমুক্ত ট্রলি। ব্যবহার করতে অন্য কারও সাহায্য লাগে না। নিজেই খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।’
সব হাতলেই
শুধু গুলশানের সুপার শপেই না, রাজধানীর সব সুপার শপে পর্যায়ক্রমে ট্রলিকে জীবাণুমুক্ত করতে দেওয়া হচ্ছে ডিসইনফেকট্যান্ট কিট। স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ শাদমান ওয়াসি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্কয়ার প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে ট্রলির হাতল জীবাণুমুক্ত করার জীবাণুনাশক কিট। গোলাকৃতির এই জীবাণুনাশক যন্ত্রটি ট্রলির এক প্রান্তে লাগানো থাকে। এটিকে হালকা চেপে ধরে হাতলের এক পাশ থেকে অন্যপাশে টেনে নিলেই মুহূর্তের মধ্যে হাতলটি হয়ে যায় জীবাণুমুক্ত। অর্থাৎ আক্রান্ত কেউ যদি এই ট্রলি ব্যবহার করেও থাকেন, তাহলেও অন্য কারও একই ট্রলি ব্যবহারের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাটা আর থাকে না এই কিট ব্যবহারের কারণে। করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের জীবাণু থেকে মুক্ত করার এই পদ্ধতির কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি আমাদের মতো সংক্রমণের শঙ্কায় থাকা সাধারণ মানুষের মানসিক দুশ্চিন্তাও অনেকটা লাঘব হবে এই উদ্যোগের জন্য।’
শাদমান ওয়াসি জানান, ‘আমরা সেপনিল জীবাণুনাশক ট্রলি কিটটি ইউনিমার্ট, মিনা বাজার, সিএসডি, স্বপ্ন, শপ অ্যান্ড সেভ, আস্থা, মেহেদি মার্ট, প্রিন্স বাজার, বাজার সারাবেলার মতো সুপার শপগুলোতে দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগ প্রশংসাও কুড়িয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। এই করোনার কালে সবাইকেই আসলে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় বাইরে যাওয়া নিয়ে, কারণ বাঁচার জন্য তো বাজার-সদাইয়ের বিকল্পও নেই। এমন একটা সময়ে এই ধরনের উদ্যোগ মানুষকে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখছে। অন্তত সুপারশপে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে হলেও ভয়টা কমাচ্ছে। সেপনিলের পরিকল্পনা রয়েছে সামনে বিমানবন্দরগুলোতেও ট্রলির জন্য এই কিটটি সরবরাহ করার।
সহজে ব্যবহারযোগ্য এই কিটটি শুধু ট্রলিতেই নয়, ব্যবহার করা যাবে যেকোনো কিছুর হাতলেই। আবার এর মধ্যে জীবাণুনাশক প্রবেশ করিয়ে রিফিলও করা যায়, তাই একটি কিট ব্যবহার করা সম্ভব অনেক দিন ধরে।