পাঠকের ভালোবাসার গল্প

সুন্দর হাতের লেখার কলাকৌশল

ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। বাছাই একটি গল্প রইল এখানে।

আমার নাম পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নামটা দিয়েছেন তুহিন স্যার।

আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে আমি সুন্দর হাতের লেখার কলাকৌশল শেখাই। একদিন ফারহানা এসে বলল, ‘আপনার টিউটরিয়াল দেখে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু দু-একটা বর্ণ কিছুতেই সুন্দর হচ্ছে না।’

আমি বললাম, ‘কোনটা?’

ফারহানা ‘প’ লিখল। একটা আড়াআড়ি হার্ট চিহ্নের পাশে লম্বা টান দিয়ে বলল, ‘এটা লিখতে গেলে খালি পুলক নামটা মনে আসে আর এ রকম হয়ে যায়।’

আমি বললাম, ‘তোমার মাথা ঠিক আছে? ফাজলামি ছাড়তে পারো না?’

খপ করে আমার হাতটা ধরে ফারহানা বলল, ‘আপনি একটু আমার হাত ঘুরিয়ে শিখিয়ে দেন, ছোটবেলায় আম্মু যেভাবে শেখাতেন।’

এক ঝটকায় হাত সরিয়ে বললাম, ‘সুন্দর হাতের লেখা শেখার চাইতে সুন্দর আচরণ করতে শেখো।’

শুশুকের মতো একটা শ্বাস নিলাম। কী বোকা মেয়ে রে বাবা, এ ধরনের চিঠি কেউ ম্যাগাজিনের ভেতরে রাখে

ফারহানা গাল ফুলিয়ে বলল, ‘আপনি তো এমন করবেনই। অনেক সুন্দরী মেয়ে আপনার ফ্যান।’

আমি খেপে গেলাম, ‘তালপুকুর চেনো? শহরের বাইরে একটা আছে। যাও, ওখান থেকে সাতটা ডুব দিয়ে এসো।’

একটা বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলল। আমার এত এত ফ্যান অথচ যাকে পছন্দ করি, তাকে মনের কথাটা জানাতে পারলাম না। আচ্ছা, তিথি কি জানে, হাতের লেখার জন্য আমি কতটা বিখ্যাত?

মিনারের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। মিনার বলল, ‘দু-চার লাইনের একটা চিঠি লিখে পাঠা।’

চিঠির বদলে লিখে পাঠালাম একটা কবিতা—হাওয়া বাতাস নেই যে কোনো গা জুড়ানোর, মনের মাঝে আছে কিছু দখিন হাওয়া। দখিন হাওয়ার রংধনুটা যায় না দেখা, মনের মাঝে এঁকে চলে সাতটি রেখা।...

চিঠি পাঠিয়ে দিন আর কাটে না। সাত দিন সাত রাত অপেক্ষার পর আমার ডাক এল। ডেকেছেন তিথির বাবা, তুহিন স্যার। কী ভয়ানক! আমার এই দুঃসময়ে মিনারকে পেলাম না।

দুরুদুরু বুকে বসে আছি তিথিদের ড্রয়িংরুমে। মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ছি। তুহিন স্যার এলেন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করলেন তিথিকে দেওয়া আমার চিঠিটা। ভয়ে আমার হৃৎকম্প থেমে যাওয়ার জোগাড়। তুহিন স্যার বললেন, ‘তোমার হাতের লেখা অনেক সুন্দর। আমি মুগ্ধ। রহস্য পত্রিকা পড়তে গিয়ে কাগজটা পেলাম।’

শুশুকের মতো একটা শ্বাস নিলাম। কী বোকা মেয়ে রে বাবা, এ ধরনের চিঠি কেউ ম্যাগাজিনের ভেতরে রাখে!

আমার নিশ্বাসকে আবার স্তব্ধ করে দিয়ে তুহিন স্যার তিথিকে ডাকলেন। তিথি এল। তুহিন স্যার বললেন, ‘আমার মেয়েকে একটু বোঝাও। ওর হাতের লেখা যেন কাকের ঠ্যাং। কবিতাটা কি তোমার লেখা?’

‘জি।’

‘তুমি পুলক হাসান নও, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।’ একটু থেমে তিনি আবার বললেন, ‘আমার মেয়েকে একটু লেখাটেখা শেখাও না।’

এভাবে মেঘ না চাইতে জল পেয়ে গেলাম। যখন ভাবতে লাগলাম, আমরা শরতে অবস্থান করছি, সহসা আসবে প্রেমের হেমন্ত এবং শিগগিরই তা বসন্তকে আবাহন করবে, ঠিক সেই সময়ের এক ধোঁয়াশা সন্ধ্যায় আবার ডেকে পাঠালেন তুহিন স্যার।

এবার আর একা গেলাম না। মিনারকে সঙ্গে নিলাম।

তুহিন স্যার আমাদের মিষ্টিমুখ করালেন। তারপর আসল কথা পাড়লেন, ‘তুমি অনেক গুণী ছেলে, বাবা। আমি চাই তোমার এই গুণ আমার মেয়ের জীবনের একটা অংশ হয়ে থাক।’

আমি কিছু বলতে পারলাম না। মিনার আমাকে খোঁচাতে লাগল।

তুহিন স্যার বললেন, ‘আমার মেয়েটা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।’

এবার আমার চাপা আটকে গেছে মনে হলো।

তুহিন স্যার কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তিথির বিয়ের কার্ড। কার্ডগুলো তুমি নিজ হাতে লিখে দিয়ো। নীল রঙের গ্লিটার কলম দিয়ে লিখবে।’

আমার সামনে এক শ বিয়ের কার্ড। লিখছি—‘কনে: সামিনা তিথি। বর: আশিক চৌধুরী।’

ফারহানা এসে পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘তালপুকুর থেকে সাত ডুব দিয়ে এসেছি। তবু ধুয়ে যায়নি।’ ফারহানা হাতের তালু মেলে ধরে আমার সামনে। হার্ট চিহ্ন আঁকা প দিয়ে লিখেছে ‘পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়’।

ফারহানা এখন আমার স্ত্রী।