সাড়ে চার কোটিতে কিনে ৮৫ কোটিতে বিক্রি

বিশ্বের বিনোদনপ্রেমী ৯০ শতাংশ মানুষেরই তাঁকে প্রথম দেখায় চিনে ফেলার কথা। এ যে স্বয়ং মিস্টার বিন! পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন মুখ থেকে একটিও শব্দ বের না করেই। কায়িক কমেডিকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। টিভি পর্দার এই মিস্টার বিন বাইরের জীবনে রোয়ান অ্যাটকিনসন।

বিশব্যাপী রোয়ান অ্যাটকিনসনের কত কত ভক্ত, আর বাস্তবের জীবনে অ্যাটকিনসন একজন গাড়িভক্ত
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বিশব্যাপী এই অ্যাটকিনসনের কত কত ভক্ত, আর বাস্তবের জীবনে অ্যাটকিনসন একজন গাড়িভক্ত। তাঁর বিশাল গ্যারেজ আর গাড়ির সংগ্রহ যে কারও মুখ হাঁ করে দিতে বাধ্য। তাই বলে রোয়ান অ্যাটকিনসনকে অন্য সব গাড়ির সংগ্রাহকের মতো ভাবলে ভুল করবেন। গাড়ি নিয়ে তাঁর দর্শন সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর মতে গাড়ি তৈরি করা হয়েছে চালানোর জন্য, বিশাল গ্যারেজে আটকে রাখার জন্য নয়। তিনি গাড়ি কেনেন, চালান, দুর্ঘটনাও ঘটান। আবার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ভাঙাচোরা গাড়ি ঠিক করেন কেনা দামের চেয়ে ঢের বেশি টাকা খরচ করে। গাড়ির সংগ্রহের মতো তাঁর গাড়ির পেছনের গল্পগুলোও বেশ রোমাঞ্চকর।

রোয়ান অ্যাটকিনসনের গ্যারেজের সবচেয়ে দামি এবং ঘটনাবহুল গাড়ি ম্যাকলারেন এফ ১। ব্রিটিশ গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ম্যাকলারেনের কালেক্টর’স এডিশন ছিল ম্যাকলারেন এফ ১। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮, ছয় বছর মাত্র ১০৬টি গাড়ি তৈরি করে তারা। তাই দাম বা গাড়িটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মোহ কমেনি। জগৎখ্যাত সব মানুষের গ্যারেজে শোভা পায় তিন সিটের এ গাড়ি। জে লেনো, ইলন মাস্ক, লুইস হ্যামিল্টন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। রোয়ান অ্যাটকিনসনের হাতে এ গাড়ি আসে ১৯৯৭ সালে। সেই সময় ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দিয়ে এ গাড়ি হাত করেন তিনি। আর তার এক বছর পরই বিপণন বন্ধ করে দেওয়ায় সেই গাড়ি হয়ে যায় ‘আউট অব মার্কেট’। মূল্য হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। আর সেই আকাশছোঁয়া দামের গাড়ি পারতপক্ষে কেউ গ্যারেজ থেকে বেরই করতেন না।

সেই গাড়িটির সঙ্গে মিস্টার বিন

কিন্তু মিস্টার বিন তো আর যে সে লোক নন। টিভি পর্দায় গাড়ির ওপরে বসে যিনি অ্যাডভেঞ্চারে মেতেছেন, সেই মানুষটা আসল গাড়ি হাতের কাছে পেলে কি গ্যারেজে বসিয়ে রাখবেন? স্টিয়ারিং হুইলের সামনে বসে ঘণ্টায় ২৪০ মাইল গতি তুলেছেন তিনি। ফলও পেয়েছেন। গাড়ি হাতে পাওয়ার দুই বছরের মাথায় প্রথম অ্যাক্সিডেন্টটা করেন। সেবার পেছন থেকে ধাক্কা মেরে বসেছিলেন সামনের গাড়িকে। তাতে শুধু গাড়ির সামনের হুড ভেঙে গিয়েছিল। ম্যাকলারেন কোম্পানির পক্ষ থেকেই সেবার সেই গাড়ি মেরামত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ দুর্ঘটনা ২০১১ সালের দুর্ঘটনার তুলনায় কিছুই নয়।

২০১১ সালে প্রাণ হাতে নিয়ে বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় তাঁর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় তিন-চারবার ঘুরে প্রথমে আঘাত হানে গাছে, এরপর সড়কসংকেতে। গাড়ির পেছনের অংশ একেবারে ভেঙে গুঁড়া হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। সেখান থেকে কোনোমতে বাঁ পাশের দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। দুর্ঘটনায় নিজের খুব একটা ক্ষতি না হলেও গাড়ির অবস্থা হয় শোচনীয়।

দুর্ঘটনায় রোয়ান অয়াটকিনসনের খুব একটা ক্ষতি না হলেও গাড়ির অবস্থা হয় শোচনীয়

৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে এক বছর ধরে সেই গাড়ি আবারও আগের মতো করেছেন তিনি। এরপরও প্রায় তিন বছর তাঁর কাছে ছিল সেই ম্যাকলারেন। শেষমেশ ২০১৫ সালে ১৮ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা দামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন তিনি। সেই সঙ্গে শেষ হয় রোয়ান অ্যাটকিনসনের ম্যাকলারেন এফ ১ অধ্যায়।