টেবিলভর্তি খাবার। আছে পিৎজা, বার্গার, পাস্তা, মচমচে ভাজাপোড়া, আইসক্রিম আর মিষ্টি। কোনো কিছুই খেতে নেই বাধা। বিশেষ করে যাঁরা খুব ভারী ব্যায়াম বা ডায়েটে আছেন, তাঁদের কাছে ছুটির দিনের এমন দৃশ্য বেশ পরিচিত। কারণ, সারা সপ্তাহেই চলতে হয় কঠিন সব নিয়মের মধ্য দিয়ে। কিন্তু একদিন এক বেলা খাবার খেতে থাকে না কোনো মানা। এই রীতিকেই বলে বিনজ। এর সঙ্গে মিল আছে চিট মিলের।
এককথায়, যেমন খুশি তেমন খাওয়ার ইংরেজি নাম ‘বিনজ’। এর আগে যোগ করে দিন নিয়ম না মানার দিনটির নাম। যদি আপনার জন্য শুক্রবার হয় সেই দিন, তবে তাঁকে বলতে পারেন ফ্রাইডে বিনজিং। হালে ডায়েট যত পরিচিতি পেয়েছে, সেই সঙ্গে ‘বিনজিং’ বিষয়টিও পাল্লা দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা—অনেকেই করেন বিনজিং।
বিনজিং বিষয়টি তো বোঝা গেল। কিন্তু এটি শরীরের জন্য কতটুকু উপকারী? সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলস এ বিষয়ে করেছে গবেষণা। এতে পাওয়া গেছে ভিন্ন কিছু তথ্য। ‘মলিকুলার নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড রিসার্চ জার্নালে’ প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, মোটেও স্বাস্থ্যকর নয় বিনজিং।
সেখানে বলা হয়েছে, সারা সপ্তাহ স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার খাওয়ার পর সপ্তাহান্তে বিনজিং আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য সব সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। মানে এক দিন এক বেলায় আপনি যা খেলেন, তাতে আপনার সারা সপ্তাহের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সুফল অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মানুষের অন্ত্র ১০০ ট্রিলিয়ন মাইক্রোবিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। যা মেটাবলিজম বা বিপাক, পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান, আর সপ্তাহে এক দিন ইচ্ছেমত ‘অস্বাস্থ্যকর’ খাবার খান, সেটি আপনার অন্ত্রের জন্য হুমকি! তাই যদি ভেবে থাকেন, সারা সপ্তাহ ডায়েট করে একদিন যা খুশি তা–ই খাওয়া যায়, সেটা ভুলে যান।
নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে এক দিন আপনার খাবারের ৮০ ভাগ স্বাস্থ্যকর হলে ২০ ভাগ ভারী খাবার রাখা যাবে। তাই সপ্তাহ শেষে টেবিল জুড়ে রাখা যা ইচ্ছে তাই খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। পিৎজার এক স্লাইস বা কেকের এক টুকরোতেই নিজেকে আটকে ফেলুন। এতে আপনার ডায়েট বা ব্যায়ামে ক্ষতি হবে না। আবার খানিকটা বিনজিংও চলবে। তবে বিনজিং যদি খুব করতে ইচ্ছা করে, তাহলে সেটা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে করবেন। কেননা, যেভাবে বিনজিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, সেটা স্বাস্থ্যের জন্য সুখবর বয়ে আনবে না।
‘বাহুবলী’ সিনেমার সেটে ডায়েট মেনে চলতেন প্রভাস। আর মাসে এক দিন চার বেলা চার পদের বিরিয়ানি খেতেন। সেটা অবশ্য পুষ্টিবিদের পরামর্শে। ক্যালরি মেপে। বলিউড তারকা শিল্পা শেঠির সানডে বিনজিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। নিজেকে ফিট রাখতে সারা সপ্তাহ তিনি ইয়োগা, ব্যায়াম ও ডায়েট সবই করেন। কিন্তু রোববারে চলে তাঁর সানডে বিনজ। তবে সানডে বিনজেও শিল্পা যা খুশি তা–ই খান তা নয়। সেদিন তিনি একটা রসগোল্লা খান বা বিকেলে বাগানে বসে চায়ের সঙ্গে তুলে নেন গরম গরম ধোয়া ওঠা মালপোয়া। মাঝেমধ্যে খান সবজির বিরিয়ানি।
শিল্পার ওই ভিডিওগুলো ভক্তদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি কিন্তু ফিট থাকার পরামর্শ দেয়। আর কীভাবে বিনজিং করবেন, থাকে তারও পরামর্শ।
সূত্র: ফিটনেস ডটকম