আজকাল অনেকের মধ্যেই রোজকার জীবনের টুকিটাকি পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘শেয়ার’ করার প্রবণতা রয়েছে। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা আবশ্যক। সন্তান যে বয়সেরই হোক, কিছু সাধারণ বিষয় সবার জন্যই এক।
ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার ক্ষেত্রে সচেতন না হলে সেখান থেকে ফায়দা নিতে পারে যে কেউ। কারও নাম, পরিচয়, ছবি কিংবা পারিবারিক তথ্য এমনভাবে শেয়ার করা উচিত নয়, যাতে অচেনা বা আংশিক চেনা যেকোনো মানুষ সেগুলো জেনে নিতে পারে। কার মনে কী আছে, সাময়িক আলাপে কেউই তা জানতে পারে না। তাই ভার্চ্যুয়াল বন্ধুত্বের সীমানা হওয়া উচিত নির্দিষ্ট। আর স্বল্প পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সব বিষয়ে খুব খোলামেলা না হওয়াই ভালো। ‘বাচ্চার ছবিই তো। সবার কাছে গেলে কী আর হবে!’—এমন ভাবনা কিন্তু ভুল।
শিশুরও আছে নিজস্ব সত্তা
অবুঝ শিশুর মজার কার্যকলাপ হয়তো হাসতে হাসতেই শেয়ার করলেন আপনি। কিন্তু সন্তান কোনো দিন এই শেয়ার করা ছবি বা ভিডিও দেখে মন খারাপ করতে পারে। সে ভাবতে পারে, ‘আমার মা–বাবা কেন এটা সবার সামনে দিতে গেল?’ কিংবা ‘মা-বাবার কাছে আমার ব্যক্তিত্বের কোনো মূল্যই নেই, এসব শেয়ার করাটাই আমার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ আবার এই মজার ছবি বা ভিডিওর কারণে আপনার অজান্তেই ‘সাইবার বুলিং’ অর্থাৎ ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বাজে মন্তব্যের শিকার হতে পারে শিশু। ‘ব্ল্যাকমেলিং’ বা প্রতারণার আশঙ্কাও বাদ দেওয়া যায় না। তা ছাড়া শিশুর ছবি বা ভিডিও খুব বেশি শেয়ার করার অর্থই হলো আপনি ভার্চ্যুয়ালজগতের মধ্যে অনেকাংশেই ডুবে আছেন। এমনটা দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের যখন নিজস্ব জীবন তৈরি হবে, সেই জীবনেও অবধারিতভাবে বিরাট জায়গা করে নেবে এই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। তখন ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করে ফেলাটাকে খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে নেবে শিশুও। পারিবারিক বন্ধনও দুর্বল হয়ে যেতে পারে এভাবেই।
যেভাবে বিপদ ডেকে আনতে পারে ছবি
খারাপ মানুষের কাছে আপনার সন্তানের ছবি থাকলে যা হতে পারে:
আপনার ক্ষণিকের দেরিতে অন্য কেউ আপনার অজান্তে আপনার সন্তানকে স্কুল থেকে নিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংগৃহীত ছবি দেখিয়ে। এমন ঘটনা অনেক দেশেই ঘটেছে।
শিশু পর্নোগ্রাফিতে আপনার আদরের সোনামণির ছবি যুক্ত করা হয়ে যেতে পারে। এমনটাও নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না।
শিশু বড় হয়ে যাওয়ার পরও অচেনা মানুষ তার ছোটবেলার ছবি দেখিয়ে নিজেকে তার পরিবারের আপনজন হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। তার কাছে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে তার কাছ থেকে আরও কোনো গোপনীয় পারিবারিক তথ্য জোগাড় করে নিতে পারে এবং পরিবারের ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া পারিবারিক পরিশীলিত চিন্তাধারার বাইরে ভিন্ন কোনো ধারায় নিয়ে চলে যেতে পারে আপনার উঠতি বয়সী সন্তানকে।
শিশুর তথ্য ও ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিন্ন একটি আইডি বা অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারে যে কেউ। ভবিষ্যতে সেই অ্যাকাউন্টধারীর সব অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্য দায়ী করা হতে পারে আপনার সন্তানকে।
ভাবিয়া করিও কাজ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব ‘বন্ধু’র সঙ্গে শিশুর ছবি শেয়ার করবেন না। ‘প্রাইভেসি’ সেটিংস থেকে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয়টা নিশ্চিত করুন। সব আত্মীয়-বন্ধুর সঙ্গেও শিশুর একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত শেয়ার না করাই ভালো। কিছু বিষয় থাকুক না একান্তই পারিবারিক। কিছু শেয়ার করতে গেলেও শিশুকে তার বয়সোপযোগী উপায়ে বুঝিয়ে বলুন, ছবিটি দিয়ে আপনি কী করতে চলেছেন। এ বিষয়ে শিশুর মতামতকে সম্মান দিন। শিশু বেড়ে উঠলে ছবি শেয়ার করার ভালো-মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত বলুন।