খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেয়ে শাঁই শাঁই করে নামছেন এক সাইক্লিস্ট। অমসৃণ পাথুরে পথ। স্পিডোমিটারের ডিজিটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হার্টবিট বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সাইকেলটা বাগে থাকতে চাইছে না কিছুতেই। শরীরের সমস্ত শক্তি কে যেন শুষে নিচ্ছে। হাল ছেড়ে মাঝপথ থেকে সরে দাঁড়ানোরও উপায় নেই। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে একসময় সমতলের দেখা মিলল। শক্ত ব্রেক কষে থামার পর হাঁ করে দম নিচ্ছেন সাইক্লিস্ট। বুকের খাঁচা ছিড়ে হৃৎপিণ্ডটা ততক্ষণে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। খানিক থিতু হওয়ার পর এক টুকরো প্রশান্তি ছুঁয়ে গেল।
‘সে আনন্দ, সে অনুভূতি বলে বোঝাবার নয়। খুব এক্সসাইটিং কিছু করার পর যেমন অনুভূতি হয়, সাইকেলে করে পাহাড় বেয়ে নামার পর তেমনি অনুভূতি হলো,’ বললেন আরাফাত রহমান। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই তরুণ মাউন্টেন বাইকিং ভালোবাসেন। বছর চারেক ধরে দেশ-বিদেশে নানা পাহাড়ের চড়াই-উতরাই বেয়ে চলেছেন।
পাহাড়ে সাইকেল চালানো অনেকের কাছে শখ। কারও কাছে আরেকটু বেশি—নেশার মতো। এ নিয়ে অনেক খেলা আছে ইউরোপ, আমেরিকায়। আমরা সমতলের মানুষ। পাহাড়-পর্বত আমাদের খুব একটা নেই। তাই অমন খেলাধুলার চলও নেই। লোকে তাই মাউন্টেন বাইকিং কী জিনিস, তাই-ই জানে না। উদ্যমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কিছু তরুণ এবার সে খেলাই নিয়ে আসছেন বাংলাদেশে।
এমটিবি বাংলাদেশ নামে সাইক্লিংয়ের একটি ক্লাব দেশে প্রথমবারের মতো এন্ডিউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ও আগামী ১ মার্চ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিলে হবে এই প্রতিযোগিতা। কী থাকবে সেই প্রতিযোগিতায়—জানতে চাইলাম আয়োজকদের একজন ফাহাদুল ইসলামের কাছে। বললেন, যাঁরা মাউন্টেন বাইকিং পছন্দ করেন, তাঁরাই মূলত লড়তে আসবেন এখানে। এ জন্য ডাউনহিলে চলনসই এন্ডিউরো বাইক লাগবে। সাধারণ এমটিবির চেয়ে এই বাইকগুলো একটু আলাদা। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি সহনশীল এই সাইকেলগুলোর সামনের সাসপেনশন ১২০ এমএম হওয়া চাই। আর চাকা ২ দশমিক ২ ইঞ্চি চওড়া হলে ভালো হয়।
রেসে সহযোগিতা করবে আন্তর্জাতিক সংগঠন এশিয়ান এন্ডিউরোর একটি প্রতিনিধিদল। ছয় কিলোমিটারের রেসে থাকবে চারটি স্টেজ। প্রথমটি দেড় কিলোমিটারের ডাউনহিল স্টেজ। দ্বিতীয়টি এক কিলোমিটারের টেকনিক্যাল ও ডাউনহিল মিলিয়ে টান টান উত্তেজনার একটা স্টেজ। এ স্টেজে ঢাল বেয়ে নামার সময় পাথুরে ও ভাঙাচোরা রাস্তা থাকবে। তৃতীয় স্টেজটি হবে ১ দশমিক ২ কিলোমিটারের ডাউনহিল ফ্লো। আর চতুর্থ বা শেষ স্টেজটি হবে দেড় কিলোমিটারের টেকনিক্যাল স্টেজ। শুধুই পাথুরে জমিন ও ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা। একেকটা স্টেজ শেষে ২০ মিনিটের বিরতি। শরীর ঠান্ডা করতে ও ভেতরের ভয়টুকু তাড়াতে ওই সময়টা খুব দরকার, জানালেন ফাহাদ।
রেসে অংশ নিতে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই টাকার মধ্যে দুদিন থাকা-খাওয়া আর রেস খেলা সবই চলবে। বিদেশিরাও চাইলে অংশ নিতে পারবে। নিয়মকানুন আর নাম নিবন্ধনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে Enduro Championship Bangladesh 2019 AES Warm Up ফেসবুক পেজে ঢুঁ দিতে পারেন। আর রেসে যাওয়ার প্রস্তুতি ঢাকায় বসেই নেওয়া যাবে। বছিলায় পাম্প ট্রেক আছে একটা। প্রতি শুক্রবার প্র্যাকটিস হয় সেখানে।
এমন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে আয়োজকদের। স্থানীয় প্রশাসন শুরুতে অনুমতি দিতে চায়নি। আর লোকে জানে না বলে প্রথমটায় তাই আমলে নিতে চায় না। যে কারণে স্পনসর পাওয়া যাচ্ছে না। স্পনসরের অভাবে তহবিল সংগ্রহে বেকায়দায় পড়েছেন আয়োজকেরা। তবু সুন্দর একটা রেস উপহার দেবেন—এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের।