সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে প্রতিদিনের আসা-যাওয়া খুব স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছিলেন রায়হান, সাকিব, জেসমিনরা। সকাল থেকে শুরু হতো নানা বিভাগের ক্লাস। পড়ালেখার ফাঁকে লাইব্রেরি, ক্যানটিন আর মাঠের আড্ডা। সব যে এমন দূরের স্মৃতি হয়ে যাবে, কেউ কি ভেবেছিল!
করোনায় আর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ক্যাম্পাসও বন্ধ। তবে পড়ালেখা থেমে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ বলছিলেন, ‘শুরুর দিকে কিছুটা প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ছিল। আমাদের শিক্ষকেরা যত্ন নিয়ে শিখিয়েছেন, কীভাবে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়, প্রেজেন্টেশন দিতে হয়, কীভাবে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে হয়।’ গুগল ক্লাসরুমে যেহেতু শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথোপকথনও হলো সেখানেই।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. কাসেদ আলী সরকার বলেন, ‘২০১২ সালে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার উদ্যোগে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে অবদান রাখা এবং ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা।’ বর্তমানে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ পাঁচটি অনুষদের অধীনে ১৪টি প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশে শুধু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মানে আগামীর চ্যালেঞ্জ ও মনস্তাত্ত্বিক দক্ষতার দিকে গুরুত্ব দেওয়া—এমনটাই মনে করেন হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. কাসেদ আলী সরকার। তিনি জানান, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি নানা বৃত্তি ও আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
এমবিএর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার সময় গ্রুপ ওয়ার্ক আর অ্যাসাইনমেন্টের চাপ কীভাবে সামলাব, সেটা নিয়ে শুরুর দিকে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। শিক্ষকেরা আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেছেন।’ ইউনানি মেডিসিনের শিক্ষার্থী জান্নাতুর রাফা যোগ করেন, ‘আমাদের সুবিধার্থে অনলাইনে বিভাগভিত্তিক প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা ভিডিও, লেকচার শিট, অ্যাসাইনমেন্ট, কেস স্টাডি এবং রেফারেন্স বই আপলোড করা হচ্ছে।’
শিক্ষকেরা নিয়মিত অনলাইনে পাঠদানের পাশাপাশি একাডেমিক বিষয়ে কাউন্সেলিং ও দলগত আলোচনার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে অনলাইনে স্প্রিং ও ফল ২০২০ সেমিস্টারের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। স্প্রিং ২০২১ সেমিস্টারের একাডেমিক কার্যক্রমও শেষের পথে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মানে ক্লাসরুম আর ক্যাম্পাসের হইহুল্লোড়। গত দেড় বছর এই সমীকরণ একটু বদলেছে। সামনাসামনি দেখা করার সুযোগ না থাকলেও শিক্ষার্থীরা নিজেদের নানা সংগঠনের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা বিকাশে সময় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক সাদিয়া আশরাফ বলেন, ‘আমরা বিতর্ক সংগঠন থেকে এ সময় কীভাবে বিতর্ক করতে হয়, কীভাবে অনলাইনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে হয়—এসব চর্চার চেষ্টা করেছি। শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। ১৫টি ক্লাবের মাধ্যমে অনলাইন কর্মশালা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়েবিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ইত্যাদির আয়োজন হয়েছে নিয়মিত। অনলাইনে যে কেউ আমাদের আয়োজনগুলো দেখতে পাবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রফেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পেশাভিত্তিক পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, যা শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের সুযোগ্য প্রফেশনাল হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।