বিদ্যুৎ অপচয় রোধের জন্য কেউ বানিয়েছেন বাতি জ্বালানো-নেভানোর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। সিগারেটের ফেলে দেওয়া ফিল্টার কাজে লাগিয়ে কেউবা তৈরি করেছেন পারটেক্স বোর্ড। অল্প জায়গায় সবুজায়ন প্রকল্প, কিংবা ফেলে দেওয়া খাবার কতজনের চাহিদা পূরণ করতে পারে, সেটি যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের করার পদ্ধতিও দেখিয়েছেন কেউ কেউ। তাঁদের সবাই পরিবেশ নিয়ে সচেতন। পরিবেশের জন্য সহায়ক, এমন সব ভাবনা আর প্রকল্প উপস্থাপিত হয়েছে ‘গ্রিন জিনিয়াস’ প্রতিযোগিতার প্রথম ও দ্বিতীয় মৌসুমে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই চমৎকার আয়োজনটি কারা করে? ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাব।
টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপদ পরিবেশের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করে গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাব। আর গ্রিন জিনিয়াস হচ্ছে তাদের একটি জমজমাট আয়োজন। সবুজ পৃথিবীর প্রত্যয় নিয়ে আইইউবির শিক্ষার্থীদের যে সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে, কথা হয় এর সভাপতি সাব্বির আহমেদের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষে পড়ছেন তিনি। সাব্বির বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো আমরা আয়োজন করি গ্রিন জিনিয়াস সিজন–১। প্রথমবার আয়োজনটি ছিল শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। থিম হিসেবে আমরা বলেছিলাম, আইইউবিকে কীভাবে একটি টেকসই প্রতিষ্ঠান বানানো যায়। সে সময় অনেক আইডিয়া জমা পড়ে, প্রচুর সাড়া পাই। পরবর্তী সময়ে এ বছর আমরা সিজন–২ আয়োজন করি। আইইউবির বাইরেও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আইডিয়া ও প্রকল্প উপস্থাপনের সুযোগ পায়। নির্বাচিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য
আমরা প্রতিযোগীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
‘বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশদূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর পরিবেশবিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এ ক্ষেত্রে আমাদের তো কিছু করা উচিত। বর্তমানে সারা বিশ্বেই পরিবেশ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তবে আইইউবি এই দিক মাথায় রেখে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ক্লাবের সঙ্গে যুক্ততা থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান সদস্যদের ক্যারিয়ার গঠনেও ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ সমস্যা এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করি এবং সেখানকার সম্ভাব্য সমাধানের লক্ষ্যে নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করি।’ সাব্বিরের পরের কথায় উঠে আসে সংগঠনটির সার্বিক কার্যক্রম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন ট্রেস ট্যাগ চ্যালেঞ্জ নিয়ে হইচই চলছে। সে সময় এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাব। তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপে চ্যালেঞ্জের কথা জানালে ৪০ জনের একটি দল ঝটপট তৈরি হয়ে যায়। সুন্দরবনের কটকা সমুদ্রসৈকতের যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা প্লাস্টিক, ময়লা পরিষ্কার করেন গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাবের সদস্যরা।
গ্রিন প্ল্যানেট সংগঠনের ডিরেক্টর অব আউটরিচের দায়িত্বে রয়েছেন সোহাইল বিন সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মশালার আয়োজন করি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন যাঁরা, তাঁরা প্রশিক্ষক হিসেবে আসেন। ফলে সদস্যরা তাঁদের কাছে পরিবেশবিষয়ক নানা প্রশ্ন করতে পারেন এবং সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে জানতে পারেন। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেসব মানুষ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন, আমরা তাঁদের এলাকায় ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করি, তাঁদেরকে সচেতন করতে চেষ্টা করি। এসব অভিজ্ঞতা থেকে ক্লাবের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ কেউ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পরিবেশবিষয়ক সম্মেলনে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।’
পরিবেশবিজ্ঞানে পড়ার পাশাপাশি গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পরিবেশবিষয়ক বাস্তবিক অনেক সমস্যা ও সমাধানের পথ দেখতে পাচ্ছেন বুশরা আহমেদ। তিনি এই ক্লাবের একজন সদস্য। ক্লাবের সঙ্গে পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে করতেই পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছে তাঁর। বুশরা বলেন, ‘পোস্টার প্রেজেন্টেশন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিসহ ক্লাবের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু শিখছি। ক্লাবের সবাই মিলে আমরা একটি পরিবার। আন্তরিকতার মাধ্যমে সবার সঙ্গেই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠছে এখানে।’
আইইউবির স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অন্তর্ভুক্ত গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাবের যাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে ক্লাবটিতে রয়েছেন প্রায় ২০০ জন সাধারণ সদস্য, ৪০ জন সক্রিয় সদস্য ও ৮ জনের একটি এক্সিকিউটিভ বডি। পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ছাড়া আইইউবির অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও গ্রিন প্ল্যানেট ক্লাবের সদস্য হতে পারেন।