সন্তান জন্মের পর ফিটনেস ফিরে পেতে

গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যাওয়াটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সন্তান জন্মের পর এই বাড়তি ওজন কমানোটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু একটু সচেতন থাকলেই সন্তান জন্মের পর দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলা যায়। শুধু কিছু অভ্যাসের চর্চা করা দরকার

ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম দারুণ কার্যকর। মডেল: হৃদি
ছবি: কবির হোসেন

প্রসবের পর ওজন বাড়ার কারণ

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, আপনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু আসলে আপনি শিশুর যত্নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তবে এই ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক কি না, তা জানা প্রয়োজন। হবু মায়ের শরীরের বিপাকক্রিয়া গর্ভাবস্থায় তাঁর ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় সন্তানের পুষ্টির জন্য মাকে বেশি খাবার খেতে হয়। তাই এ সময় পেট, কোমর ও শরীরের নিচের অংশে মেদ জমে যায়। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে মায়ের ওজন বেড়ে যায় ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত। সন্তান জন্মের সময় ৪ থেকে ৬ কেজি ওজন কমে। আর বাড়তি ওজন কমতে প্রসবের পর সাধারণত ছয় মাস লেগে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি ছয় মাস পরও মেদ থাকে এবং আরও ওজন বাড়ে, তাহলে অবশ্যই মাকে সচেতন হতে হবে। কারণ, বাড়তি ওজনের ফলে পরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজন কমাতে হলে ক্র্যাশ ডায়েট করা যাবে না।

কখন ওজন কমাবেন

দ্য ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের তথ্য অনুযায়ী, সন্তান প্রসবের অন্তত দুই মাস পর ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। ওজন কমানো শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।

ডেলিভারির পর ওজন কমানোর টিপস

পুষ্টিযুক্ত খাবার: সঠিক পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। আপনার খাদ্যতালিকায় যেন ফল, শাকসবজি, প্রোটিন ও দুগ্ধজাত জিনিস অবশ্যই থাকে। এগুলো আপনার ওজন কমানোর সময় আপনার শরীরে সঠিক পুষ্টির জোগান দেবে।

প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেয়ে ফেলা কোনো কাজের কথা নয়। মডেল: হৃদি

স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস: ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে দিনে চার থেকে পাঁচবার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে ভালো ফল পেতে পারেন। স্ন্যাকস হিসেবে ফল, লবণ ছাড়া বাদাম, প্রোটিন বার বা দই খেতে পারেন।

পরিমিত খাবার গ্রহণ: যখনই খাবেন, খাবারের পরিমাণ যেন কম থাকে। একবারে বেশি খাবার খাবেন না। খাবারের পরিমাণ না বাড়িয়ে খাওয়ার বেলা (তিন বেলারের বদলে চার থেকে পাঁচ বার) বাড়িয়ে নিন। এতে হজমের সমস্যা কম হবে। খাবার সময় ও ধরন ঠিক রাখতে কোনো ডায়েট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

লোভ কমান: উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে ওজন বাড়বেই। তাই যখন চকলেট বা আইসক্রিমের মতো লোভনীয় খাবার খেতে ইচ্ছা করবে, নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করুন। বদলে এসব খাবারের স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন। যেমন ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। কোনো মিষ্টি ফল যেমন কলা বা রাঙালু বেছে নিতে পারেন।

ভালোবেসে খাবার খান: আপনি খাওয়ার সময় খাবারকে ভালোবেসে খান। খাওয়ার সময় সব ইন্দ্রিয় খাবারের দিকে রাখুন। এতে খাবারটি ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস হয়। আপনি যখন খাবারটি ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন, তখন আপনার বেশি খাওয়ার অভ্যাস কমে যাবে।

না খেয়ে থাকবেন না: আপনি যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে কখনোই পেট খালি রাখবেন না। অনেকে মনে করেন, না খেয়ে থাকলে দ্রুত ওজন কমবে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। না খেয়ে থাকলে আপনার ওজন আরও বাড়তে পারে। দ্রুত দেখা দিতে পারে পেটের সমস্যা।

পানি পান করুন: বেশি করে পানি পান করুন। এতে মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়বে, আবার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতেও এটি সাহায্য করবে।

সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, টানা ছয় মাস ধরে বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করালে মায়ের ক্যালরি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর যখনই আপনার ক্যালরি খরচ হবে, আপনাআপনি ওজন কমবে।

সক্রিয় থাকুন: নিজেকে সব সময় দৈনন্দিন কাজে সক্রিয় রাখুন। দেখবেন, এতে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকবে। ওজন কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের খুবই প্রয়োজন, তাই অবশ্যই প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাবেন।

হালকা ব্যায়াম করুন: নিয়মিত হাঁটুন ও হালকাভাবে জগিং করুন। তবে শরীরে বেশি চাপ দেবেন না। কারণ, বাচ্চা হওয়ার পর এমনিতেই শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসে। স্বাভাবিক প্রসব হলে যখন থেকে ব্যায়াম করতে পারবেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিলে সময়টা একটু বেশি লাগতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু ব্যায়াম শুরুতেই নিষিদ্ধ থাকতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ব্যায়াম করুন। প্রসবের পর ওজন কমানোর জন্য যোগব্যায়াম দারুণ কার্যকর। তাই যোগাসনের অভ্যাস থাকলে সেটাও আবার শুরু করতে পারেন।