ঢাকা শহরের শ্যামলী পার্কে কেয়া, রাধাচূড়া, ঝাউগাছের সঙ্গে দেখা গেল চার-পাঁচ ফুট উচ্চতার একটি আমগাছ। একটু খেয়াল করে দেখা গেল, আমগাছটিতে মুকুল ও গুটি এসেছে। কৌতূহলী হয়ে কিছু ছবি তোলা এবং ভিডিও করা হলো। এ নিয়ে ফোনে যোগাযোগ হলো আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, দেশে বেশ কয়েক জাতের বারোমাসি আমের সঙ্গে আছে একটি বিদেশি জাতের বারোমাসি আম। বিদেশি আমটি থাইল্যান্ডের কাটিমন। এই জাতটি দেশে নতুন। পরিপক্ব এই আমে তেমন কোনো আঁশ নেই। তা থেকেই কৌতূহল জন্মাল আমগাছটি নিয়ে।
এই আমগাছ, মুকুল ও গুটির ছবি দেখে রাজধানীর আসাদগেট হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ সাবিহা আফরোজ বললেন, এটি থাই জাতের কাটিমন আম। কাটিমন বারোমাসি আম। এই আমের চারা আসাদগেট হর্টিকালচার উদ্যানে থাকলেও বর্তমানে সব বিক্রি হয়ে গেছে।
কাটিমন আম নিয়ে খোঁজখবর শুরু করতে গুগল এনে দিল একটি লেখা। লিখেছেন মেহেরপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। সেই লেখার সূত্রে জানা গেল চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ী আবুল কাসেমের কথা। লেখাটি থেকে জানা যায়, কাটিমন নামের এই আম বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে আবুল কাসেমের নার্সারি থেকে। আবুল কাসেমের ব্যবসায়ী বন্ধু নুরুল ইসলাম থাইল্যান্ড থেকে চারা এনে তাঁকে দিয়েছিলেন ২০১০ সালের দিকে। নার্সারির মালিক আবুল কাসেম সেই চারা বড় করেন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। এরপর এটি ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
জীবননগরের নার্সারি ব্যবসায়ী আবুল কাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ হলো ফোনে। তিনি বললেন, থাইল্যান্ডের এই আম ফলে বছরে তিনবার। এরই মধ্যে আশ্বিন-কার্তিক মাসে শেষ হয়েছে কাটিমন আম পাকার তিন পর্বের একটি পর্ব। আম উঠে যাওয়ার পর প্রতিবার গাছের ডাল ছেঁটে দেওয়া হয়। ডাল কেটে দেওয়ার পর কচি যে শাখা গজায়, সেই শাখায় আবার মুকুল আসে। কার্তিক মাসে কেটে দেওয়ার পর বর্তমানে কচি যে ডাল গজিয়েছে আমগাছে, তাতে আবার মুকুল এসেছে। এই পর্বের আম উঠবে ফাল্গুন মাসে।
আবুল কাসেম আরও জানান, চারা লাগানোর তিন-চার মাস পরই গাছে মুকুল আসে। কিন্তু মুকুল ভেঙে দিতে হয়। এক থেকে দেড় বছর বয়স পর্যন্ত আম না ফলানো ভালো। এতে গাছটি সবল হয়ে উঠবে।
ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, নাকফজলি, রানীপছন্দ, গোপালভোগ, হিমসাগর প্রভৃতি জাতের আমের সঙ্গে থাইল্যান্ডের কাটিমন আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন বেশ চাষ হচ্ছে বলেও জানালেন আবুল কাসেম।