চীনে এসেছি প্রায় দুই বছর। জিংচু ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে এখানকার পরিবেশটাও নিজের করে নিয়েছি। তবু প্রতিটি ক্ষণেই দেশের কথা মনে পড়ে। তবে ভাদ্র-আশ্বিন মাস এলে একটু অন্য রকম লাগে। এই দুটো মাসে যেন দেশ আর শৈশব আরও বেশি মনে পড়ে। কারণ, আশ্বিন মানে কাশফুলের কোলে ভেসে আসে দুর্গাপূজা।
সবার পূজা মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত হলেও আমার পূজা শুরু হতো সেই ভাদ্র মাস থেকেই। প্যান্ডেল কোথায় হবে, কেমন হবে, প্রতিমার থিম, রং ও পোশাক কী হবে—তা নিয়ে প্রচুর মাথাব্যথা ছিল আমার। প্রতিমা বানানো ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, এটাও স্কুলের ফাঁকে দেখতাম। যদিও বারোয়ারি পুজো, আর আমার মতের কোনো গ্রাহ্যও ছিল না, তবু এই সব নিয়ে আমার অনেক চিন্তা ছিল। আমিই যেন পুজো কমিটির সভাপতি, এমন একটা ভাব ছিল আমার।
এত আয়োজনের পাঁচ দিনের পুজো এলে আমি যেন নিজেকে পক্ষীরাজ মনে করতাম। স্কুল নেই, কোনো পড়াশোনা নেই। খালি আড্ডা, হাসি আর খাওয়া। দশমীর দিন যে কী খারাপ লাগত! মা চলে যেতেন আর আমার এক অপেক্ষা শুরু হতো।
মধ্যবিত্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম আমার। তাই যেকোনো উৎসবে বাংলা বর্ষপঞ্জির চল ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি। পূজার দিন গুনতে গুনতে আরেকটা দিন মাঝখানে পড়ত, ২৫ ভাদ্র। আমার জন্মদিন। যেহেতু আশ্বিনের গা ঘেঁষে জন্মদিন আমার, তাই দুর্গাপূজা খুব কাছে আসা মানে আমি আরেকটু বড় হচ্ছি, এটা বুঝতাম। শৈশবের সঙ্গে সঙ্গে এই কাজগুলো স্মৃতির খাতায় স্থান পেলেও দেশে থাকতে অন্তত ষষ্ঠী থেকে পূজার আমেজ পেতাম। তবে এখন বিদেশে ফেসবুক আর অনলাইনের খবরে পূজার আমেজ দেখা আর পড়া ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পূজা হলেও এই বিশাল চীনে তা যেন সোনার হরিণ।
এই যেমন এখনো তা অনুভব করছি। ১০ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন গেল। বন্ধুদের সঙ্গে কত আনন্দ হলো। তবু দেশে কাটানো জন্মদিনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কি তুলনা চলে! ফেসবুকে সবাই যখন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল, তখনই মনে হচ্ছিল এক দৌড়ে চলে যাই প্রিয় শহরে।
অনেকে জানতে চায়, বিদেশে জন্মদিন কেমন কাটে? আমি বলি নেহাত মন্দ নয়, অনেক অনেক উপহার, অনেকে চমক নিয়ে হাজির হয়, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি মেনে সবার সঙ্গে কেক কাটি, শুধু পূজা পূজা সুগন্ধটা নেই!
টুম্পা প্রামানিক
হুবেই, চীন।