বেসিনের পানিতে আঁজলা ভরতে গেলেই বুঝবেন শীতের আবহ শুরু হয়েছে। পৌষ আসতে এখনো তিন সপ্তাহ বাকি। তবু ঘরের মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটতে গেলে বা রাতে ঘুমানোর আগে মোটা কাঁথায় টান পড়া মানে তো ঘরে শীতের প্রবেশ। তাই বাসার কাজে ওম পেতে কিছু যন্ত্র কিনে আনতে পারেন এখন, যা আপনার ঘরে থাকার দিনগুলোকে ভরিয়ে দেবে উষ্ণতায়।
কাজ ছাড়া বেশির ভাগ সময় এখন বাড়িতে কাটাচ্ছেন অনেকে। করোনাভাইরাসের কারণে আগের চেয়ে বেড়েছে চা–কফি বা গরম পানি পানের অভ্যাস। আবার গোসলের সময়ও অনেকে কুসুম গরম পানি খোঁজেন। ঘরের পুরো পরিবেশে এখন সবাই উষ্ণতা খুঁজবেন, এটাই স্বাভাবিক। ওয়ালটন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক নাজিবুর রহমান বলেন, ‘শীতকালে কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চাহিদা বাড়ে। যেমন কেটলি, গিজার, ওয়াশিং মেশিনের চাহিদা বাড়ে। ঘরের পরিবেশ উষ্ণ করতে সহজ যন্ত্র রুম হিটার।’
শীতকালে নিত্যব্যবহারের জন্য এসব পণ্য দরকারি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। আর তাই নির্মাতারা নিয়মিত তাদের পণ্য তালিকায় যুক্ত করছে আরও আধুনিক সব সুবিধা।
কেটলির নানামুখী ব্যবহার
করোনাভাইরাসের কারণে শুধু চা–কফির পানি গরম করতে নয়, গরম পানির ভাপ নিতেও বৈদ্যুতিক কেটলি কিনছেন অনেকে। আদা–লেবুর কুসুম গরম পানি পান করতে কেটলির ব্যবহার বেড়েছে। সহজে এক–দুই মিনিটে পানি গরম হয়ে যাচ্ছে চুলার সাহায্য ছাড়া। এ ছাড়া গরম পানির ভাপ নিতেও কেটলির ব্যবহার হচ্ছে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কেটলি আছে বাজারে। ধারণক্ষমতার ওপর দাম কমবেশি হয়। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণত চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, জাপান ও ভিয়েতনাম থেকে আসে কেটলি। দেশেও তৈরি হচ্ছে কেটলি। ১ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত পানি গরম করার কেটলি সহজে মিলবে বাজারে। ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে ওয়ালটন, মিয়াকো, ফিলিপস, প্যানাসনিক, নোভা, ভিগো ইত্যাদি। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজারে কেনা যাবে এসব কেটলি।
ঘর থাক ওমে ভরা
শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখতে জনপ্রিয় যন্ত্র রুম হিটার। সহজে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে নিয়ে রাখা যায় হিটার। এর গরম হাওয়া দ্রুত ঘরে ফিরিয়ে আনবে স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলে ঘরের মধ্যে গরম পোশাক পরে থাকার কোনো দরকার হবে না। ঘরের মেঝেতে, ছোট্ট টুলের ওপর যেমন রাখা যাবে রুম হিটার, আবার দেয়ালে ঝোলানো রুম হিটারও আছে। সুইচ বা রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র দিয়ে কমবেশি করার সুবিধা আছে এসব হিটারে। ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় মিলবে নানা রকম রুম হিটার। ঘরের আয়তন বুঝে রুম হিটার কিনতে হবে।
সহজে পরিষ্কার করুন কাপড়
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে জ্বর, ঠান্ডা–কাশির মতো সাধারণ রোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন সবাই। তাই বেশি সময় ধরে ঠান্ডা পানিতে ভেজার কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি বেড়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে। সে কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিয়ে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈকত আজাদ বললেন, সাধারণত শীতে ওয়াশিং মেশিনের বিক্রি বেশি হয়। তবে এবার গরমকালেও (করোনার কারণে) প্রায় অধিকাংশ ব্র্যান্ডের ওয়াশিং মেশিনের মজুত শেষ হয়ে যায়। শীতে প্রতিদিনের পোশাক সহজে ধুয়ে ফেলার জন্য ওয়াশিং মেশিনের বিকল্প নেই।
অনেকের ধারণা ছিল ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। আবার অনেকে হাতের স্পর্শ ছাড়া কাপড় পরিষ্কারে পুরো আস্থা রাখতে পারেন না। ওয়ালটনের ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপক নাজিবুর রহমান জানান, প্রতিনিয়ত মানুষের সুবিধার কথা ভেবে এসব পণ্য আধুনিক হয়। এখন নতুন যেসব অটো ওয়াশিং মেশিন বাজারে আসছে, সেগুলোর মান খুব ভালো। তাই কোনো ধরনের হাতের স্পর্শ ছাড়া পোশাক পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে দ্রুত। বিদ্যুৎ বিলও কমানোর মতো আধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে এসব যন্ত্রে। সাধারণত ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং মেশিন কেনা যাবে। তবে ১০–১২ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাবে সাধারণ মানের ওয়াশিং মেশিন।
গিজার এখন নিজের ঘরে
আগে শীতকালে কোথাও বেড়াতে গেলেই দেখা মিলত গিজারের। স্নানঘরে গ্রাহককে গরম পানির সুবিধা দিত এসব গিজার। সেই গিজার এখন এতটাই সহজলভ্য যে চাইলেই নিজের রান্নাঘর বা বাথরুমে ব্যবহার করতে পারেন। দেশে অনেক ব্র্যান্ড এই পোর্টেবল গিজার বিক্রি করছে। আছে অনেক অনলাইন শপেও। স্মার্ট এসব গিজার সহজেই ঘরের পানির লাইনের সঙ্গে যুক্ত করা যায় ইচ্ছেমতো। পানির ট্যাব বা ঝরনার মতো ব্যবহারের সুবিধা আছে এসব গিজারে। আকার ও ব্র্যান্ডের কারণে গিজারের দাম কমবেশি হয়। তবে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে গিজার। আপনাকে শুধু বেছে নিতে হবে নিজের সুবিধা দেখে।
শীতে বদলে যাওয়া হাওয়া আর পানি নিজের সুবিধামতো গরম করে নিতে এই চারটি যন্ত্র রাখতে পারেন ঘরে। এতে শীত আপনাকে অসুবিধায় ফেলার আগে নিজেই তাকে কাবু করে দিতে পারবেন। আরাম করে ঘরে বসে বদলে যাওয়া বাইরের পরিবেশ দেখতে তখন মন্দ লাগবে না।