বিছানাতেই শুয়ে আপন মনে খেলছিল সমৃদ্ধি। বয়স আর কত! মাত্র তিন মাস। ধরার সামর্থ্য হয়নি, তাই দোলনার ওপরে ঝুলতে থাকা রঙিন খেলনাগুলোই প্রিয় খেলনা। পাঁচ বছর বয়সী মাশিয়াত লালরঙা সাইকেলটি নিয়ে বিকেল হলেই বাসার নিচে নামবেই। কিছুক্ষণ মনের আনন্দে সাইক্লিং করে আবার ঘরে ফেরা। আর আট মাস বয়সী নক্ষত্রের প্রিয় খেলনা কাগজ। হাতে নিয়ে কুচি কুচি করাই তার মূল কাজ।
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাফিকা সুলতানা বলেন, শিশু যেটাতে আনন্দ পায়, সেটাই তার খেলনা। হতে পারে সেটা শুধু কোনো কাগজের টুকরা। কিন্তু তারপরও শিশুর জন্য খেলনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সেটা যেন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।
খেলা একটা কাজ, তাই সেটাতে চোখ ও হাতের বিকাশও হয়। ছোট ছোট খেলা শিশুর সূক্ষ্ম পেশিগুলোর বিকাশ ঘটায়। শিশুর জন্য খেলনা নির্বাচনের সময় খেলনার রং, আকার, আকৃতি, ওজন, শিশুর বয়স, জমিন (খসখসে না মসৃণ)—বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
খেলার মাধ্যমেই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ হয়ে থাকে। যেমন ছবি আঁকা, মালা গাঁথা, ব্লক দিয়ে কিছু বানানোর খেলা খেললে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হয়। ছড়ার বই, রঙের বই পেলে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। ক্রিকেট, বল, ব্যাডমিন্টন খেললে শিশুর শারীরিক বিকাশ হবে। যদিও এসব খেলা সে খেলবে তিন বছর পর থেকে।
রাফিকা সুলতানা যোগ করেন, যেগুলো দেখে শিশু হাসে, সেটাই তার খেলা। শিশুর খেলা শুরু হয় হাত–পা নাড়া দিয়ে। সে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত–পা নাড়ে, আঙুল চোষে। কিন্তু খেলার ক্ষেত্রে শিশুর জন্য বয়সের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ছয় মাস বয়সী একটি শিশুকে সাইকেল এনে দিলে সেটা তাকে মোটেও আকর্ষণ করবে না। কারণ, সে সেটা চালাতে পারবে না। এমন ঘটলে তার বিকাশ তো হবেই না, পাশাপাশি দুর্ঘটনার ভয়ও থাকবে। তিন থেকে ছয় মাসের বাচ্চার জন্য খেলনায় শব্দ যেন সুন্দর হয়। তাহলে সে সেদিকে ঘুরে দেখবে। এক থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত খেলনা হালকা হতে হবে এবং সেটা যেন ধোয়া যায়। দামি দামি খেলনা দেওয়ার চেয়ে দেশীয় উপকরণে তৈরি খেলনা দিতে হবে শিশুকে বেশি। এ সময় ধরা, দেখা এসব সূক্ষ্ম পেশির কাজ সে করতে পারবে খেলনা দিয়েই। আড়াই থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের ব্লক দেওয়া যেতে পারে। গণনা করা শিখবে।
মাথায় রাখতে হবে, খেলতে খেলতেই শিশু যেন দৈনন্দিন বিষয়গুলো শিখতে পারে, তার চিন্তাশক্তির যেন বিকাশ হয়। খেলনা যেন ধারালো না হয়। বারডেমের শিশু বিভাগের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা ফাহমিদা রহমান বলেন, নবজাতকদের জন্য বেছে নিতে পারেন রঙিন এবং ঝুলে থাকবে, এমন খেলনা। ঝুমঝুমির মতো খেলনার হালকা শব্দে সে মাথা ঘুরিয়ে দেখবে। পাঁচ-ছয় মাস বয়সের আগে শিশুরা মুঠ করতে পারে না। মুঠ করতে পারলে তখন তার জন্য অন্য খেলনা। এক দেড় বছর বয়সে শিশুকে দেওয়া যেতে পারে ব্লক। পরে আরেকটু বড় হলে বই রং করা বা সাইকেল দেওয়া যায় শিশুদের। তবে যখন যেটা দেওয়া হোক, বয়স অনুযায়ী দিতে হবে। ছোট বয়সে শিশুদের অতিরিক্ত শব্দের খেলনা দিলে সে ভয় পেয়ে যেতে পারে। বয়স হলে শিশুকে ঘরের ভেতর ও বাইরে দুই স্থানেই খেলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।