বস্তু থেকে সমান্তরাল আলোকরশ্মি চোখের কর্নিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায় এবং চোখের লেন্সের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয়বার বেঁকে চোখের রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে, তাই আমরা ওই বস্তু দেখতে পাই। কিন্তু কোনো কারণে প্রতিবিম্ব যদি লেন্সের সামনে বা পেছনে সৃষ্টি হয়, তবে বস্তুটিকে অস্পষ্ট বা ঝাপসা দেখা যায়। তখন প্লাস বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা (লেন্স) ব্যবহার করে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার ওপর সৃষ্টি করা হয় এবং বস্তুটিকে পরিষ্কার বা স্পষ্ট দেখা যায়।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশীদ বলেন, বস্তুকে অস্পষ্ট বা ঝাপসা দেখাকে সাধারণত রিফ্রাকটিভ ইরর বা পাওয়ারজনিত দৃষ্টিস্বল্পতা বলা হয়। এটি সাধারণত চার ধরনের হয়—মায়োপিয়া (ক্ষীণদৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি), প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে এবং অ্যাসটিগমেটিজম। এর মধ্যে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি সাধারণত শিশুদের বেশি হয় বা দেখা যায়।
মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি
এ ধরনের রোগীরা ‘কাছে’ ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলা হয়। শিশুরা সাধারণত এই সমস্যায় ভুগে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর দেখতে সমস্যা হচ্ছে?
বাচ্চা বলতে পারে না বা বোঝেই না, ‘আমি কম দেখি’। দুইভাবে বোঝা যায় এটি। একটি হলো, তার বাবা–মায়েরা লক্ষ করেন যে যতই তাকে টেলিভিশন দেখার সময় পেছনের দিকে নিয়ে আসা হয়, সে সামনে চলে যায়। অর্থাৎ খুব কাছ থেকে টেলিভিশন দেখতে চায়, এটি একটি বিষয়।
অন্যটি, অনেক সময় স্কুল থেকে অভিযোগ আসে বাচ্চা ঠিকমতো ক্লাসনোট করে না বা বাচ্চা ঠিকমতো মনোযোগ দেয় না। বোর্ডে লিখলে সেটি তুলতে পারে না। দেখা যায়, পরবর্তী দিন ঠিকমতো বাড়ির কাজ করে নিয়ে আসে না। তখন হয়তো তাঁরা বুঝতে পারেন, বাচ্চার চোখে কোনো সমস্যা আছে। উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বোঝার জন্য প্রি-স্কুল স্ক্রিনিং করা হয়।
প্রথম কখন চোখ পরীক্ষা করাবেন?
যখন সমস্যা দেখা দেবে তখন তো পরীক্ষা করাবেনই। তা ছাড়া সাধারণত শিশুর বয়স তিন বছর হলেই চোখ স্ক্রিনিং করানো উচিত। সমস্যা হলো, যদি এক চোখের দৃষ্টি ভালো এবং অন্য চোখে দৃষ্টি কম থাকে তখন যেহেতু সে একটিকে ব্যবহার করছে, তাই অন্যটির প্রতি তার মনোযোগ থাকে না বা বুঝতে পারে না। এমনকি অনেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকও সমস্যাটি বুঝতে পারেন না। তাই স্ক্রিনিংটা কিন্তু এ জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর যাদের চোখে দৃষ্টিজনিত সমস্যা ধরা পড়বে, তাদের ছয় মাস অন্তর পাওয়ার পরীক্ষা করানো উচিত।
চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শে রোগের ধরন অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে।
চশমা যারা পরতে চায় না, তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারবিধি একটু জটিল, তাই অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না।
বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। লেজার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। সব রোগীর সব সময় ল্যাসিক করা সম্ভব হয় না, চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চোখ ল্যাসিকযোগ্য হলেই একমাত্র ল্যাসিক সার্জারি করা হয়।
কন্টাক্ট লেন্স পরা কি ভালো?
স্বাভাবিক চোখের জন্যে স্বল্প মেয়াদে কন্টাক্ট লেন্স পরা যেতে পারে। তবে চোখের কোনো রোগ থাকলে, চোখে পানি কম থাকলে, কন্টাক্ট লেন্স পরা ঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে
বাচ্চাদের দৃষ্টিস্বল্পতার ত্বরিত চিকিৎসা প্রয়োজন, না হয় অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।
কাছ থেকে সেসব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ ট্যারা হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
মাথাব্যথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথাব্যথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবে, তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহারে অস্বস্তি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়।