ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, প্রকৌশল...কত বিষয়ই না আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। কোন বিষয়ে পড়ব, সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র এই বিভাগে আমরা একেকটি বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আজ ‘শিক্ষা’ সম্পর্কে বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক গৌতম রায়।
কী পড়ানো হয়?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক আগে থেকেই শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু আছে। খুব বেশি দিনের না হলেও বাংলাদেশেও রয়েছে শিক্ষা নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের সুযোগ রয়েছে এখন। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে বা শিক্ষা অনুষদে শিক্ষার্থীরা শুধু যে শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন বা স্রেফ স্নাতক ডিগ্রি পাবেন, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। স্নাতক শ্রেণির শিক্ষাক্রমের দিকে লক্ষ্য করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। চার বছরের কোর্সে একজন শিক্ষার্থী যেসব কোর্স করেন তার মধ্যে আছে শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষার ভিত্তি, শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষাক্রম, জেন্ডার শিক্ষা, শিক্ষা গবেষণা, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি। কোর্সগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, দক্ষ মানুষ হওয়ার জন্য ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে জ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণের জন্য যেসব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন, ‘শিক্ষা’ বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করলে সবই পাবেন একজন শিক্ষার্থী।
শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে টিচিং কোর্স করতে হয়। ছয় মাস মেয়াদি এক সেমিস্টারের পুরোটিই কোনো প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে হয় এবং তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে ব্যবহারিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ শেষে একজন শিক্ষার্থী জানতে পারেন, কীভাবে শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করতে হয়, কীভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে হয় কিংবা শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হয়।
ক্যারিয়ার কোথায়?
শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব কাজের ক্ষেত্র। যেমন—শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প ইত্যাদি।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন পরিচালিত পরীক্ষাগুলোসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক সুযোগ। যেমন ইউনিসেফ, ইউনেসকো, ইউএনএইড, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন বা দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পান শিক্ষার স্নাতকেরা।
ভবিষ্যৎ কী?
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে শিক্ষার ধরন কিংবা পাঠ্য বিষয়, বেড়েছে শিক্ষার পরিসর ও ক্ষেত্র। শিক্ষায় নতুন নতুন উদ্ভাবন শিক্ষাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তুলছে। ফলে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার চাহিদা শেষ হওয়ার নয়, বরং নানা দৃষ্টিকোণ ও পরিসর থেকে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে শিক্ষা অনেকাংশে অনলাইন নির্ভর। ফলে এই খাতে কাজও হচ্ছে অনেক বিস্তৃত পরিসরে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম যেন এক নতুন বিপ্লব নিয়ে এসেছে৷ অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষা খাতেও তৈরি হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ। এরা শিক্ষাকে আরও সহজ করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ধরনের উদ্যোগগুলোর কারণে শিক্ষার শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ আরও বিস্তৃত হবে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ এখানে অনেক বেশি। পৃথিবীর নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা নিয়ে পড়ার জন্য অনুষদ, স্কুল তো রয়েছেই; শুধু শিক্ষা বিষয়ে আলাদা বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে অনেক দেশে। এসব দেশের বিভিন্ন নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।
কমনওয়েলথ বৃত্তি, ফুলব্রাইট বৃত্তি, কমনওয়েলথ শেয়ার্ড বৃত্তি, ইকুইটি অ্যান্ড মেরিট বৃত্তি, ইত্যাদি নানা ধরনের বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্ব থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।