‘উফ...প্রতিদিন সকাল আটটায় ক্লাস। এর কোনো মানে হয়?’
‘গরমকাল হলেও একটা কথা ছিল। শীতের দিনে সকাল আটটা!’
‘সকাল না, ওটাকে ভোররাত বলা উচিত!’
‘সকালে ক্লাস করা মানে ঘুমটাই নষ্ট।’
দুজন সহপাঠী এভাবেই মূল্যায়ন করছিল সকালের ক্লাসকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছে ওরা। বড় হওয়ার আনন্দ এর আগে ওরা টের পায়নি। স্বাধীন জীবনের সুখ বুঝতে শুরু করেছে মাত্র। সারা সন্ধ্যা আড্ডা দাও, বলার কেউ নেই। রাত জেগে ইন্টারনেট-ফেসবুকে থাকো, কেউ বাধা দেবে না। এমন সুন্দর রুটিনে প্রথম বাধা হয়ে এল সকালের ক্লাস। কিন্তু সকালের ক্লাস মানে কি ঘুম নষ্ট?
মোটেও তা নয়। সকালে উঠলে দিনটাই অনেক বড় হয়ে যায়। আর দিন বড় হওয়া মানে অনেক বেশি কাজ করা যায়। তবে বেশি কাজ মানে আড্ডা আর মোবাইল নয়। ওগুলো তো থাকবেই, তবে সবার আগে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যের কথা স্কুলের শিক্ষকেরা সব সময় শুনিয়েছেন—‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। তবে ওটাকে ছাত্ররা ভাবসম্প্রসারণ পর্যন্তই চিন্তা করেছে। মা-বাবাও সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবেন। তবে তাদের কাছে স্বাস্থ্য মানে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করা। আমার মেয়ে কিছু খেতে চায় না, আমার ছেলে শুধু চিকেন ফ্রাই খায়...এ পর্যন্তই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসার পর ওটুকু বলার বা দেখার মতোও কেউ থাকে না। তা ছাড়া বয়সটাই এমন—কেউ কিছু বললেও সহজে গায়ে লাগে না। নিজের অভিভাবক তখন মনে হয় নিজেকেই। ফলে এই পর্যায়ে এসে শরীরের দিকে একেবারেই মনোযোগ থাকে না শিক্ষার্থীদের। ব্যায়াম-শরীরচর্চা বাদ দিন, ঠিকমতো খাওয়া-ঘুমের দিকেও ন্যূনতম নজর থাকে না বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের।
অথচ তরুণ বয়সের এই সময়টা সবচেয়ে মূল্যবান। এ সময় অনেকের রাত জাগার অভ্যাস তৈরি হয়। নতুন রুটিনে খাওয়া-ঘুম এলোমেলো হয়ে যায়। তরুণ শরীরের ক্ষয় আশপাশের কারও নজরেই পড়ে না। অনেক দিন পরে কেউ হয়তো দেখে বলে, ‘এ কী অবস্থা তোমার শরীরের!’ এ রকম কথা খুব বেশি নাড়াও দেয় না মনে। কারণ, বড় কোনো অসুখ তো নেই। কথায় বলে, ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়।’ রাত জাগা আর খাওয়া-ঘুমের নতুন নিয়ম শরীর তো বেশ মানিয়ে নিয়েছে! আপাতভাবে এমনটাই মনে হয়। তবে এই অনিয়মের ফল হয় দীর্ঘমেয়াদি। আর এর পরিণাম টের পাওয়া যায় বয়স একটু বাড়লেই। তাই এমন কিছু করা উচিত নয়, যা শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য সতর্ক হওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই। কী করা উচিত, জেনে নেওয়া যাক:
● রাত জাগা যাবে না। প্রয়োজনে ভোরে উঠে পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজ করতে হবে।
● প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে জিমে যাওয়া যেতে পারে। প্রথম তিন মাস খালি হাতে ব্যায়াম করা উচিত।
● সাঁতার না জানলে শিখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সাঁতার কাটা ভালো।
● ভোরবেলা ক্লাস বা অন্য কারণে না পারলে বিকেল বা সন্ধ্যার কোনো নির্দিষ্ট সময়ে শরীরচর্চা করতে হবে।
● ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি আউটডোর গেম খেলা যেতে পারে বন্ধুরা মিলে।
● খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, ভালো খাবার ও তাজা ফলমূল সাধারণ রোগবালাইকে দূরে রাখে।
● দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পানের প্রয়োজন।
● স্কাউটিং, বিএনসিসি সবাই করবে এমন নয়, তবে নিজেকে চালাতে হবে চমত্কার রুটিনের ভেতর।
● ধূমপান, বাজে অভ্যাস ইত্যাদি তৈরি হলে দ্রুত তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
● ইতিবাচক আলোচনায় অংশ নিতে হবে এবং নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে।
মনে রাখতে হবে, শারীরিক সুস্থতা নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখে। আর পড়াশোনাতেও মনোযোগ বাড়িয়ে দেয়। আবার বলি, ‘শরীরের নাম মহাশয়...।’ একে খারাপ রুটিনে চালালেও মানিয়ে নেবে; আবার ভালো রুটিনে চালালেও চলতে পারবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে দুই রকম রুটিনের ফল নিশ্চয় এক রকম হবে না।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়