রসুইঘরের উদ্যোক্তা

শখ যখন সাফল্যের মুকুট

শিক্ষক পম্পা সেন শর্মা এখন উদ্যোক্তাও
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষকতার নিশ্চিত চাকরি। স্বামীকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সংসার। চাইলে এভাবেই অনায়াসে নির্ঝঞ্ঝাটে জীবনটা পার করে দিতে পারতেন পম্পা সেন শর্মা। তবে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দী থাকতে চাননি তিনি। উদ্যোক্তা হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন পেয়েছেন সাফল্য। দেখছেন আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন।

খাবার তৈরি করেই এই সাফল্য পেয়েছেন পম্পা। তাঁর তৈরি নানা পদের খাবারের সুবাস এখন আর শুধু বন্দরনগর চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাঝেমধ্যে দেশের বাইরেও চলে যায়। হিমায়িত খাদ্যের পাশাপাশি তাঁর হেঁশেলে তৈরি হয় নানা ধরনের আচার, নাড়ু, সন্দেশসহ মজাদার সব পদ। বোরহানি, জিরাপানিসহ বিভিন্ন ধরনের পানীয়ও আছে।

পম্পা সেন শর্মার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর মধ্যে নতুন সংসার। তবে সংসারজীবনেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি তিনি। পড়াশোনা অব্যাহত রাখলেন, করলেন বিএসএস ও এমএড। ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে নিলেন রান্নার প্রশিক্ষণ। শিখলেন খাবার তৈরির নানা কৌশল। শাড়ি তৈরির কাজও শিখেছেন। এর মধ্যে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম নগরের একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিলেন।

অবসরের পর খাবার নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর

২০২০ সালের জুলাইয়ে করোনা মহামারির আবহে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন পম্পা সেন শর্মা। শুরুর সে গল্পই শোনালেন পম্পা, ‘করোনার কারণে মানুষ ঘরে আটকে গেল। ঘরবন্দী মানুষের নানা ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছা জাগে। কিন্তু চাইলেও অনেকের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব হয় না। তাদের কাছে নিজের তৈরি খাবার বিক্রি করলে মন্দ হয় না, এ রকম একটা ভাবনা আসে। আর ছোটবেলা থেকে রান্নার প্রতি আমার বেশ আগ্রহ ছিল। শখও বলতে পারেন। এ জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, ছোট বোন ও সহকর্মীরাও উৎসাহ দিলেন।’ আসলে তাঁর বানানো খাবার ও আচারের আগে থেকেই ভক্ত সহকর্মীরা। তাঁরা তাগিদ দিলেন। পেছন থেকে উৎসাহ জোগালেন ছোট বোন মুনমুন সেনগুপ্ত। তাঁদের তাগিদে ফেসবুকে পম্পা’স কিচেন নামের একটি পেজ খোলেন।

শুরুতে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত ব্যক্তিরাই ছিলেন গ্রাহক। তাঁদের মাধ্যমে খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বাড়তে থাকে চাহিদা। প্রথম দিকে যেখানে মাসে ৬-৭ হাজার টাকার বিক্রি হতো, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার। পম্পা সেন শর্মা বলেন, ‘ফ্রোজেন খাবার চট্টগ্রামের বাইরে পাঠানো সম্ভব হয় না। তবে নাড়ু, আচার, আমসত্ত্ব, নারিকেল তেল, সন্দেশের বেশ চাহিদা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের এত সাড়া পাব, কল্পনায়ও ছিল না।’

একটু একটু করে ব্যবসার পরিধি যখন বাড়ছিল, আশপাশের লোকজন তখন নানা ধরনের কটূক্তি করতেন। শিক্ষকতা করার পরও কেন অন্য কাজ করতে হবে? টাকার কি বেশি দরকার? এত লোভ ভালো নয়। তবে আশপাশের লোকজন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করলেও স্বামী শুভ্রকান্তি সেন শর্মা, শাশুড়ি লীনা সেন বেশ সহযোগিতা করেছেন। পম্পা বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। তাই বন্ধের সময়টা কাজে লাগাতে পেরেছি। তখন খুব একটা সমস্যা হয়নি। আর যখন চাহিদা বেড়ে যায়, তখন শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পাশাপাশি নিজের মা ও বোন নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।’

এখন আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন পম্পা। শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর খাবার নিয়েই একটা প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছা রয়েছে, যেখানে ২০-৩০ জন নারীর কর্মসংস্থান হবে। এটি করতে পারলেই নিজেকে সার্থক মনে করবেন পম্পা।