বাউলসাধক লালন সাঁইয়ের গানের মুগ্ধ শ্রোতা ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বেই। ভিনদেশিরাও মজেছেন লালনগীতির মর্মবাণীতে। তাই হয়তো দেবোরাহের মতো অনেকে ঘর ছেড়েছেন; অনেকে আবার ঘর না ছাড়লেও চর্চা করছেন লালন দর্শন।
মাকি কাজুমিও ঘর ছেড়েছেন
১৯৯১ সালের কথা। জাপানের ওসাকা শহরে মাসব্যাপী বাউল গানের আসর বসেছিল। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে কাজুমি আয়োজনের শেষ দিন গান শুনতে আসেন। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রের এই শিক্ষার্থী গানের অর্থ না বুঝলেও সাধন দাস ফকিরের গায়কিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন বোঝার চেষ্টা করেন গানের মর্মকথা। একদিন মাকি কাজুমি সন্ধান করেন সাধন ফকিরের। চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। দেখা করেন সাধন ফকিরের সঙ্গে। লালন সাঁইজি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। দিনে দিনে এতই মুগ্ধ হন যে সাধন ফকিরের কাছ থেকে নেন বাউল পথে দীক্ষা।
আয়েশি জীবন ছেড়ে একদিন স্থায়ীভাবে চলে আসেন সাধু গুরুদের পথে। প্রায়ই আসেন বাংলাদেশে। জাপান ছেড়ে স্থায়ী সাধন–জীবন শুরু করেন সাধন ফকিরের আশ্রমে ।
নাম বদলে ‘আদম ফকির’
বোনকে হারিয়ে খুব মুষড়ে পড়েছিলেন সুইডেনের অ্যাডাম। নানা দেশ ঘুরে এসেছিলেন ভারতে। দেশটিতে এসেছিলেন সুফিবাদ এবং অধ্যাত্মবাদের জ্ঞান অর্জনের জন্য।
ভারতে এসেই লালন সাঁই নামের সঙ্গে পরিচয়; গানের সঙ্গেও। লালনসংগীতের মর্মবাণী অ্যাডামকে টেনে আনে ভারত থেকে বাংলাদেশে—কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায়।
২০১২ সালে সেই যে যুগসূত্র তৈরি হলো, এরপর প্রতিবছর লালন উৎসবে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। সাধু গুরুদের সঙ্গে থাকেন। লালন দর্শন নিয়ে কথা বলেন। ৩৮ বছর বয়সী এই পরিব্রাজক কাজ করে যেতে চান লালনের গান নিয়ে।
কেলি ম্যাকার্থির লালনচর্চা
কেলি ম্যাকার্থি পেশাগত কাজের সূত্রে বাংলাদেশে এসেছিলেন। কাজ করতেন ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির নানা অঙ্গনের মতো পরিচয় হয় লালন সাঁইয়ের গানের সঙ্গে। তবে লালনের গানের প্রতি আলাদা অনুরাগ তৈরি হয় গানের মর্ম যখন বুঝতে শেখেন। বাংলা ভাষা রপ্ত করেন। লালনগীতি চর্চা করেন। লালনভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। ২০১৬ সালে অংশ নেন লালন পথযাত্রায়। এখন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকেন, তবে লালনের গান–জীবনী নিয়ে কাজ করে চলেছেন। যোগাযোগ রেখেছেন বাংলাদেশের লালনভক্তদের সঙ্গে।
গ্রন্থনা: কবির হোসেন