‘প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ার পরও “বেস্ট লুজার” হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ হয়। আর সেখান থেকেই এরপর চ্যাম্পিয়ন হয় আমাদের দলটি’—বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহ্মিদা মিনা। শিক্ষা আর সহশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ধরনের কার্যক্রমেই তিনি এগিয়ে।
ক্যাম্পাসে সহশিক্ষা কার্যক্রমের শুরুটা কীভাবে হলো? মিনা বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কের সঙ্গে জড়িত হতে হলে অংশ নিতে হয় ফ্রেশারস ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায়। আমি তখন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কাউকে ঠিকমতো চিনি না। কাদের সঙ্গে দল করব, সেটাও ঠিক করতে পারছিলাম না। পরে আমার মতো আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে দল তৈরি করি। স্কুল-কলেজে আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও বাকি দুজনের জন্য এ অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই নতুন।’ বিশ্ববিদ্যালয় নবাগতদের জন্য আয়োজিত প্রতিযোগিতায় মিনা অংশ নিয়েছিলেন বিতর্কের জগতে ‘নবাগত’ দুই সদস্যকে নিয়ে। ১১০টি দল ছিল সেই প্রতিযোগিতা। দিন শেষে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফাহ্মিদা মিনার দল। ‘৩৩০ জনের মধ্যে আমি ডিবেটার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হই’—বলছিলেন তিনি। তখনই হয়তো দূরের ক্যাম্পাসটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন ঢাকায় বড় হওয়া এই শিক্ষার্থী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ অব লিবারেল ডিবেটার্স (গোল্ড), বাংলাদেশের ফ্রেশারস ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০টি দল অংশ নেয়। সেখান থেকে ফাহ্মিদার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। মিনা হন ডিবেটার অব দ্য ফাইনাল। মুক্তমঞ্চে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্যাম্পাসের সবার কাছে পরিচিতি পেতে শুরু করেন তিনি। উপস্থাপনা করেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও নবীনবরণ অনুষ্ঠানে।
ফাহ্মিদা মিনা বড় হয়েছেন পুরান ঢাকায়। স্কুল ও কলেজ পার করেছেন সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাইস্কুল ও হলিক্রস কলেজ থেকে। মিনা যেন একের ভেতর সব! নাচ, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, প্রজেক্ট উপস্থাপন, বিতর্ক, খেলাধুলা—সবকিছু মিলিয়েই ঝুলিতে রয়েছে অনেকগুলো পুরস্কার। শৈশবে নাচ শিখেছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে।
ছোটবেলা থেকেই বিতর্কের প্রতি ঝোঁক ছিল। স্কুলে পড়ার সময় দুবার অংশ নেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। খেলাধুলাতেও সমান পারদর্শী মিনা। ছিলেন কলেজের স্পোর্টস লিডার। বাস্কেটবল, দাবা, ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করেন। বাস্কেটবল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হন কলেজে পড়ার সময়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চ্যাম্পিয়ন হন ইনডোর গেমসে।
ভাববেন না বিতর্ক, খেলাধুলায় অংশ নিতে গিয়ে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছেন মিনা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২২তম ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম স্থান তাঁর দখলে। সিজিপিএ–৩.৯২ পেয়ে বিভাগে তিনি প্রথম। মুখের কোনায় একটু হাসি নিয়ে মিনা জানান, বোটানি ডিপার্টমেন্টের ফল এখনো প্রকাশ না হওয়ায় ফ্যাকাল্টিতে প্রথম কি না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন।