রাজবধূর রাজকাহিনি

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রাজপরিবারের একজন হিসেবে প্রথম রাজকীয় সফরে নটিংহামে যান মেগান মার্কেল। সঙ্গে ছিলেন স্বামী প্রিন্স হ্যারি
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রাজপরিবারের একজন হিসেবে প্রথম রাজকীয় সফরে নটিংহামে যান মেগান মার্কেল। সঙ্গে ছিলেন স্বামী প্রিন্স হ্যারি

রাজপুত্র হ্যারির হাত ধরেই বাগদানের খবর দিতে এসেছিলেন গণমাধ্যমের সামনে। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এ মেয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবার এবং ব্রিটিশ জনপদে বেশ সাড়া ফেলবেন। যদিও রাজমুকুট পাওয়ার তালিকায় অনেক পেছনে থাকবেন। সারা জীবন হয়তো ‘ডাচেস অব সাসেক্স’ হয়েই থেকে যাবেন। তারপরও ব্রিটিশ রাজপরিবারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছেন তিনি। তালাকপ্রাপ্ত, মিশ্রিত কৃষ্ণাঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, অভিনেত্রী—নেতিবাচকভাবেই এই তকমাগুলোকে পর্যালোচনা করা হচ্ছিল সব মহল থেকে। কিন্তু নিজ গুণাবলি দিয়ে মেগান মার্কেল সবকিছুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছেন।
রাজপরিবারের নিয়ম অনেক। সেগুলো মনে রেখে সঠিকভাবে পালন করাটাও আরেক নিয়ম। যুক্তরাষ্ট্রে যে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, এখন সেগুলো স্বর্ণালি দিন হিসেবে ছবির অ্যালবামে বন্দী হয়ে আছে। শাশুড়ি প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে অনেকেই মেগান মার্কেলের মিল খুঁজে পান। রাজপরিবারের ভয়টা এ কারণেই বেশি।

প্রিন্সেস ডায়ানার সাবেক প্রধান পরিচালক পল ব্যারেল দ্য সানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, রাজপরিবার যে বিষয়গুলোকে ভয় পায়, মেগান মার্কেলের মধ্যে তার সবই আছে। প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানটিই যেন এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসেলে অবস্থিত সেন্ট জর্জ চ্যাপেল তার পুরো জীবনে এমন বিয়ে দেখেনি। দেখেনি ব্রিটিশ জনপদও। রাজপরিবার তো কল্পনাই করতে পারেনি। কৃষ্ণাঙ্গ যাজক, মেহমান এবং গায়ক দল ছিল এই বিয়ের চমক। অন্য সব রাজবিয়ে থেকে আলাদা করে দেয়। বিয়ের পর গত ছয় মাসে এমন অনেক নিয়ম ভেঙেছেন মেগান। যে কারণে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের ভুরু কুঁচকে গেছে।

মেগান মার্কেল

মা হওয়ার খবর দিয়ে চমকে দিয়েছেন
মেগানের দেওয়া নতুন চমকে রাজপরিবারসহ সবাই খুব খুশি। মা হতে চলেছেন মেগান মার্কেল। এখানেও কিন্তু আছে। সন্তানকে সাধারণভাবে বড় করতে চান তিনি। লন্ডন শহর থেকে একটু দূরে সন্তানদের রাখতে চান, যাতে লন্ডনের হইচই সন্তানকে ছুঁতে না পারে। অতিরিক্ত আদর ও রাজপরিবারের আরাম–আয়েশ থেকে সাধারণভাবে বড় হলেই ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে।

ছোটখাটো বিষয়েও অশান্তি
বাড়ির সহযোগীদের সঙ্গে মুঠোফোনে এসএমএস আদান-প্রদান করাটাও ভালো চোখে দেখছে না রাজপ্রাসাদ। রাজপরিবারের বড় বধূ কেট আবার এদিক দিয়ে বেশ মানিয়ে গেছেন। রাজপরিবারের সব নিয়মকানুনই পালন করে আসছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমে মেগান নিজের দরজাটা নিজেই ঠেলে বন্ধ করে দেন। এটা রাজ নিয়মে নেই।

পোশাক নিয়ে ঝামেলা
মেগান সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছেন তাঁর পোশাক নিয়ে। রাজপরিবারের নিয়ম এখানে বারবার ভাঙা হচ্ছে। কালো পোশাক শুধু শোক প্রকাশের জন্যই আলমারিতে রেখে দেন রাজপরিবারের সদস্যরা। মেগান কিন্তু বেশ কয়েকবার সেটা পরেও ফেলেছেন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক আয়োজনে। আগের জীবনের ছেঁড়াফাটা জিনসগুলোও পরতে পারবেন না আর, রাজপরিবারের নারীদের জন্য যেকোনো আবহাওয়াতে স্বচ্ছ লম্বা মোজা পরা অনেকটাই বাধ্যতামূলক। বাগদানের ঘোষণা দেওয়ার সময় মেগান চলে এসেছিলেন সেটা না পরেই। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। রাজপরিবার এ বিষয়টি নিয়েও কিছুটা বিরক্ত। বিয়ের পর অবশ্য সে নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করছেন। হাতাকাটা বা অফ শোল্ডার পোশাক পরাও অলিখিতভাবে নিষেধ। সেটাও পরে ফেলেছেন মেগান।

ভোট না দেওয়া
রাজপরিবারে বিয়ে করার কারণে কোনো রকম রাজনৈতিক মতামত দিতে পারবেন না মেগান। এ কারণে ভোট দেওয়ার অধিকারটাও তাঁর আর নেই।

একা ঘোরা বন্ধ
বাগদানের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একা ঘুরে বেড়ানোও তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুরে বেড়ানোর সময় আর কেউ থাকুক না থাকুক, দেহরক্ষী আগলে রাখবেন সব দিক থেকে। রাজপরিবারের যেকোনো আনুষ্ঠানিক বেড়ানোর পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায় ছয় মাস আগে থেকেই। কখন, কোথায়, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন, বসে থাকবেন, সেটাও সেই পরিকল্পনার মধ্যেই থাকে।

বাবা থমাস মার্কেলের সঙ্গে

বাবার সঙ্গে যোগাযোগ
বিয়ের সময় থেকেই মেগানের বাবা থমাস মার্কেল নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দেন তাঁর নাটকীয় ব্যবহারের কারণে। এরপর থেকেই বাবার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন মেগান। ফোন এলেও সেটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

জেসিকা মালরনির সঙ্গে

বিদায় পুরোনো জীবন
অভিনেত্রী হিসেবে নাম কুড়িয়েছিলেন। সেই পেশাকে ইতিমধ্যেই বিদায় দিতে হয়েছে। সেটা রাজপরিবারের নির্দেশেই। পুরোনো বন্ধুদের অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কাকে বিশ্বাস করবেন, কাকে করবেন না—এ বিষয়টি এখনো শিখছেন। তবে মেকআপ আর্টিস্ট ডেনিয়াল মারটিন ও কানাডিয়ান স্টাইলিস্ট জেসিকা মালরনির সঙ্গে সম্পর্ক আছে। সামাজিক মাধ্যমের সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। ভক্তদের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সেলফি নেওয়া। বন্ধ করে দিতে হয়েছে অটোগ্রাফ দেওয়া। কারণ, এখন তিনি আরও বড় সেলিব্রিটি। এত দিন অভিনয় করতেন নিজ ইচ্ছায়। এখনো অভিনয় করছেন, হাসিমুখে অনেক অনিচ্ছুক বিষয়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন।

সবার নজরে থাকা


সবার নজরে থাকা
অভিনেত্রী ছিলেন, তাই ক্যামেরার সামনে থাকার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন যেন সেটি অনেকটাই চিন্তায় ফেলে দেয়। ঠিকমতো হাসছেন কি না, দাঁড়িয়েছেন কি না, খাচ্ছেন কি না—সবকিছু নিয়েই এখন আলোচনা হচ্ছে।

সূত্র: পিপল ম্যাগাজিন