মাধবী, মালঞ্চ, মালা, জুঁই ফুল, তেরছি, হাজার বুটি ইত্যাদি কতশত নাম আর কতশত মন–ভোলানো নকশা দিয়ে যে শাড়ি বোনা হয়, বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তার গল্প ছড়িয়ে আছে! সুতার টানাপোড়েনে তৈরি হয় জামদানি, টাঙ্গাইল শাড়ি, পাবনার শাড়ির রঙিন জমিন। তৈরি হয় কুমারখালীর লুঙ্গি, গামছা। কারখানায় তৈরি হয় ডেনিম, টি–শার্ট ইত্যাদি। জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮০০ কোটি মিটার কাপড় প্রয়োজন হয় ব্যবহারের জন্য। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষ প্রতিবছর গড়ে আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ মিটার কাপড় ব্যবহার করে থাকে। এই বিপুল পরিমাণ কাপড় তৈরি হয় কোন যন্ত্রে?
যে যন্ত্র কাপড় তৈরি করে, সে যন্ত্রের নাম ‘তাঁত’, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘লুম’। পৃথিবীতে দুই ধরনের তাঁতযন্ত্র আছে। এর একটি হস্তচালিত তাঁত বা হ্যান্ডলুম, অন্যটি বিদ্যুৎ-চালিত তাঁত, যাকে সবাই চেনে পাওয়ারলুম নামে। পাওয়ারলুম মূলত হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের আধুনিক সংস্করণ।
ধারণা করা হয়, মাকড়সার জাল বোনা, বাবুই পাখির বাসা বোনা—প্রাণিজগতের এ রকম হাজারো পশুপাখি ও কীটপতঙ্গের বয়নপ্রক্রিয়া দেখে মানুষ বস্ত্র বয়নের বা কাপড় তৈরির ধারণা পায়। তারপর দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর মানুষ খুব সরল ধরনের তাঁতযন্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বস্ত্র উৎপাদনের জন্য হস্তচালিত তাঁত বা হ্যান্ডলুম হচ্ছে প্রাচীন শিল্প। এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতিরা হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রে মোটা ও সূক্ষ্ম কাপড় তৈরি করে চলেছেন সুদীর্ঘ কাল ধরে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় তাঁতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত এবং এখনো করে। প্রাচীনকালে হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রগুলো বানানো হতো গাছের ডাল, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে। আরও ব্যবহার করা হতো পাট বা গাছের বাকল থেকে তৈরি করা দড়ি। মানুষ যতই প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হয়েছে, ততই এই সরল তাঁতযন্ত্রগুলোর গঠন কিছুটা জটিল হয়েছে। মূলত, অধিক উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে এমনটা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নানা জনপদে বিভিন্ন রকমের তাঁতযন্ত্রের প্রচলন হয় ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে। সারা পৃথিবীর হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের ধরন দেখে এগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—১. টানা বা উল্লম্ব তাঁত, ২. ভূমি সমান্তরাল তাঁত, ৩. গর্ততাঁত ও ৪. কোমরতাঁত।
টানা বা উল্লম্ব তাঁত
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য–প্রমাণকে সামনে রেখে বলা যায়, টানা বা উল্লম্ব তাঁত সবচেয়ে পুরোনো তাঁতযন্ত্র। মানুষ কাপড় ব্যবহারের একেবারে শুরুর দিকে আজকের মতো পাতলা, সূক্ষ্ম ও নকশাদার কাপড় তৈরি করতে পারত না। কলা, শণ ইত্যাদির মতো বিশেষ কিছু গাছের তন্তু, সরু লতা ও পশুর নাড়ি দিয়ে তখন কাপড় তৈরি করা হতো। অবশ্য সেগুলোকে আধুনিক কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে ভুল হবে। এসব কাপড় টানা বা উল্লম্ব তাঁতে তৈরি করা হতো। এ ধরনের তাঁতে গাছের তন্তু, লতা কিংবা পশুর নাড়ি বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে কোনো গাছের ডাল বা বাঁশ অথবা কাঠের ফ্রেমে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো লম্বা করে। তারপর সেগুলোর প্রস্থের দিকে একটার পর একটা তন্তু, লতা বা নাড়ির ওপর-নিচ দিয়ে একই রকম তন্তু, লতা বা নাড়ি হাত দিয়ে ঢুকিয়ে কাপড়ের মতো কিছু একটা তৈরি করা হতো। পরবর্তী সময়ে মানুষ বিভিন্ন গাছের তন্তু থেকে কিছুটা সরু সুতা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠীর ওজিবওয়ে সম্প্রদায় এ ধরনের তাঁতযন্ত্র ব্যবহার করত বলে জানা যায়। এর চেয়ে একটু উন্নত উল্লম্ব বা খাঁড়া কাঠামোর ফ্রেমে তৈরি তাঁতযন্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া, গ্রিস, মিসর ইত্যাদি অঞ্চলে। মনে করা হয়, মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া অঞ্চলের এই তাঁতযন্ত্র দেখে গ্রিস ও মিসরের লোকজন অনুপ্রাণিত হয়েছিল। অবশ্য বিভিন্ন ধরনের উল্লম্ব তাঁতের প্রচলন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হয়েছিল বিভিন্ন সময়। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬০ অব্দের একটি গ্রিস মৃৎপাত্রে এ ধরনের তাঁতের ছবি দেখা যায়। এই উল্লম্ব তাঁতের কিছুটা উন্নত সংস্করণ দিয়ে বর্তমানে ট্যাপেস্টি তৈরি করা হয়। কার্পেট তৈরি করার জন্যও এ ধরনের তাঁতযন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
সমান্তরাল তাঁত
উল্লম্ব তাঁতকে মাটিতে শুইয়ে দিলে যে আকার ধারণ করবে, সমান্তরাল তাঁত আসলে সে রকমই। এ ধরনের তাঁতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দুটি লাঠিতে টানা সুতা বেঁধে হাত দিয়ে পোড়েনের সুতা টানা সুতার ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে কাপড় বোনা হয়। টানা সুতা ভূমি বা মাটির সমান্তরালে থাকে বলে এ তাঁতকে সমান্তরাল তাঁত বলা হয়। বাংলাদেশের মান্দি বা গারো সম্প্রদায় কাপড় বুননের জন্য এ ধরনের তাঁত ব্যবহার করে, যদিও তার প্রচলন এখন খুবই কম। রংপুর অঞ্চলে শতরঞ্জি বানানোর জন্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় ভেড়ার লোমের কম্বল তৈরি করতে সমান্তরাল তাঁতযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্র তাঁতের ব্যবহার করা যন্ত্রাংশে কিছুটা পার্থক্য আছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে মিসরের বাডারি অঞ্চলে পাওয়া একটি মাটির পাত্রে এ ধরনের তাঁতের ছবি দেখা যায়। বাডারি থেকে এ ধরনের তাঁতশালার মডেলও আবিষ্কার করা হয়েছে। এখনো যাযাবর বেদুইন সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের তাঁতযন্ত্রের প্রচলন দেখা যায়।
উল্লম্ব ও সমান্তরাল তাঁতযন্ত্রে মূলত মোটা কাপড় তৈরি করা হয় বা হতো।
গর্ততাঁত
আমরা আরাম করে এখন যে পাতলা কাপড় ব্যবহার করি, তা মূলত তৈরি শুরু হয় গর্ততাঁত আবিষ্কারের পর। ধারণা করা যায়, তাঁতযন্ত্র এবং সুতার উন্নয়ন মোটামুটি একই সঙ্গে বা কাছাকাছি সময় ঘটেছে। কারণ, সুতা ও তাঁতযন্ত্র একে অপরের পরিপূরক। এই গর্ততাঁত মূলত আগের টানা এবং সমান্তরাল তাঁতের অভিজ্ঞতায় তৈরি হওয়া যন্ত্র, তাই এটি আগের তাঁতযন্ত্রের চেয়ে বেশ উন্নত।
মাটির গর্তের ওপর টানা সুতাসহ বিশেষভাবে তৈরি তাঁতযন্ত্র স্থাপন করে সেই গর্তের প্রান্তে বসে কাপড় বোনা হয় বলে এ তাঁতযন্ত্রের নাম গর্ততাঁত বা পিটলুম। বিমে সুতা পেঁচিয়ে রেখে সুতার অন্য প্রান্ত কাপড়ের বিমে শক্ত করে আটকে তাঁতি গর্তের প্রান্তে বসে কাপড় বোনেন। এরপর যতটুকু কাপড় বুনন হয়ে যায়, ততটুকু কাপড়কে বিমে জড়িয়ে রাখা হয়। এভাবে পুরো কাপড় বুনন শেষ হলে কাপড়ের বিম থেকে মাপমতো কাপড় কেটে নেওয়া হয়। মিহি বা সূক্ষ্ম সুতার কাজ করার জন্য এ ধরনের তাঁতযন্ত্র অত্যন্ত কার্যকর। পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধরনের তাঁতের প্রচলন ছিল এবং এখনো কিছুমাত্রায় প্রচলিত আছে। মাটির কাছাকাছি থাকায় গর্ততাঁতে কাজের সময় সুতা ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে খুব কম।
গর্ততাঁত আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি সনাতনী গর্ততাঁত বা থ্রো সাটল পিটলুম, অন্যটি ঠকঠকি বা ফ্লাই সাটল পিটলুম।
সনাতনী গর্ততাঁতে সুতা ভরা মাকুটি হাতে ছুড়ে টানা সুতার ভেতর দিয়ে ঢুকয়ে কাপড় বয়ন করা হয়। আমাদের প্রাচীন মসলিন কাপড় এই তাঁতে বয়ন করা হতো। এখনো জামদানি কাপড় এই তাঁতেই বয়ন করা হয়। জামদানি তাঁতের স্থানীয় নাম ‘পডি’। সনাতনী গর্ত তাঁতেই একসময় বিভিন্ন ধরনের কাপড় বয়ন করা হতো। বলা চলে, এ ধরনের তাঁতই সূক্ষ্ম কাপড় তৈরির প্রাথমিক ধাপ তৈরি করেছিল।
ঠকঠকি বা ফ্লাই সাটল পিটলুম হলো গর্ততাঁতে হাতে মাকু ছোড়ার পরিবর্তে একটি কাঠের ফ্রেমর দুই প্রান্তে ‘দক্তি’, ‘সাটল বক্স’ লাগিয়ে তাতে ‘মেড়া’ বসিয়ে একটি দড়ি ও হাতলের সাহায্যে মাকুকে দ্রুতবেগে চালনা করে কাপড় বোনার পদ্ধতি। এটি সনাতনী গর্ততাঁতের চেয়ে উন্নত বলে এতে কাপড় উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হয়। ১৭৩৮ সালে জন কি নামের একজন ব্রিটিশ এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরে এটি ডেনিশদের হাত ধরে ভারতে আসে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর ছিল ডেনিশ উপনিবেশ। সেখানেই এই ঠকঠকি বা ফ্লাই সাটল লুম প্রথম প্রচলিত হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই তাঁত ছড়িয়ে পড়ে। তাঁত বোনার সময় ঠকঠক শব্দ হয় বলে এর বাংলা নাম ‘ঠকঠকি’। গর্ত থেকে তুলে এই ঠকঠকি তাঁতকে বিশেষ ধরনের ফ্রেমে বসিয়ে দিলে সেটি ঠকঠকি ফ্রেমতাঁত হয়ে যায়।
কোমরতাঁত
সুতার বিম একটু উঁচু কিছুর সঙ্গে বেঁধে, কাপড়ের বিমের সঙ্গে দড়ি বা বেল্ট বেঁধে সেই দড়ি বা বেল্ট কোমরের সঙ্গে পেঁচিয়ে টান টান করে কাপড় বোনা হয় কোমরতাঁতে। এই তাঁতের গঠনকাঠামো খুবই সরল। কখন, কোথায় এই তাঁতের জন্ম হয়েছিল, সেটা জানা যায় না। প্রয়োজনের সময় এই তাঁত খুলে নিয়ে যেকোনো জায়গায় চলে যাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখনো চাকমা, মারমা, মণিপুরি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এই তাঁতের ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে পাটের ধোকড়া বা চট বানানোর জন্য এই তাঁতযন্ত্র এখনো ব্যবহার করা হয়। এ তাঁতযন্ত্রেও মোটা কাপড় তৈরি করা হয়।
টানা বা উল্লম্ব তাঁত, সমান্তরাল তাঁত, গর্ততাঁত এবং কোমরতাঁত—এ চার ধরনের তাঁতের বাইরে চিত্তরঞ্জন তাঁত নামের একটি তাঁতযন্ত্র রয়েছে। মূলত, এটি ফ্রেমতাঁত।
চিত্তরঞ্জন তাঁত
গত শতকের উনিশ-বিশ শতকে পুরো পৃথিবীতে অধিক পরিমাণে কাপড় উৎপাদনের জন্য তাঁতযন্ত্রের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। ভারত উপমহাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। এ সময় তৈরি হয় ‘চিত্তরঞ্জন’ নামে একটি সেমি-অটোমেটিক তাঁতযন্ত্র। গর্ততাঁতকে কারিগরিভাবে উন্নত করে সেমি-অটোমেটিক এই তাঁত তৈরি করা হয়। এই তাঁতযন্ত্র হাতে চালনা করা তাঁতযন্ত্রের মধ্যে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি কাপড় তৈরি করতে সক্ষম।
এই তাঁতে কাপড় বয়নের প্রক্রিয়া ফ্লাই সাটল পিটলুম বা ঠকঠকি তাঁতের মতোই। তবে পার্থক্য হলো চিত্তরঞ্জন তাঁতে কাপড় বোনার সময় সুতার বিম ও কাপড়ের বিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। অর্থাৎ কারিগরি উন্নয়নের ফলে দুটি বিম নিজেরাই ঘুরতে থাকে। চিত্তরঞ্জন তাঁত একদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োজনীয় সুতা ছাড়তে থাকে, অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাপড় জড়াতে থাকে। ফ্রেমতাঁতে বা গর্ততাঁতে কাপড়ের বিমে কাপড় জড়ানোর কাজটি তাঁতিকে করতে হয় নিজ হাতে। স্থানীয়ভাবে অনেক জায়গায় একে জাপানি তাঁত বলা হলেও জাপানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। চিত্তরঞ্জন তাঁতের উদ্ভব ঘটে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে। এর সঙ্গে ফ্লাই সাটল পিটলুম এবং ডেনিশদের যোগাযোগ আছে। শ্রীরামপুর থেকে এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে চিত্তরঞ্জন তাঁতের সূত্রপাত হয়েছে মোটামুটি ১৯৪০–এর দশকের দিকে।
বিদ্যুৎ–চালিত তাঁত বা পাওয়ারলুম
হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বিদ্যুৎ–চালিত তাঁতযন্ত্র আবিষ্কার করে আজ থেকে মাত্র ২৩৫ বছর আগে। এ ক্ষেত্রে হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের ডিজাইনকে উন্নত করে, বৈদ্যুতিক সুবিধাকে কাজে লাগানো হয়। ১৭৮৪ সালে এডমন্ড কার্টরাইট পাওয়ারলুম বা যন্ত্রচালিত তাঁতের ডিজাইন করেন। এর এক বছর পর যন্ত্রটি তৈরি করা হয়। পরে আরও প্রায় দুই দশক চলে যায় এই যন্ত্রের উন্নতি সাধনের জন্য। এই তাঁত অধিক পরিমাণে কাপড় তৈরি করতে পারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে।
এখন পুরো পৃথিবীর বেশির ভাগ কাপড় পাওয়ারলুম তথা বিদ্যুৎ–চালিত তাঁতে তৈরি করা হয়। গার্মেন্টসের কাপড় বলে আমরা যেসব কাপড় ব্যবহার করি, সেগুলো এই পাওয়ারলুমে তৈরি করা। বাংলাদেশ পাওয়ারলুমের মাধ্যমে গার্মেন্টসশিল্পে অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু এই পাওয়ারলুম আসার আগে এবং এখনো একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানুষের কাপড়ের চাহিদা মেটায় হস্তচালিত তাঁতযন্ত্র।
যদি কখনো সুযোগ হয়, তাহলে ঢাকার পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর অপর তীরে রূপগঞ্জের রূপসী, নোয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বা টাঙ্গাইলে অথবা সিরাজগঞ্জ-পাবনা, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আমাদের আদি তাঁত এবং তাতে কাপড় তৈরি দেখে আসবেন। আর যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি পান, তাহলে যেকোনো গার্মেন্টস কারখানাও ঘুরতে পারেন কীভাবে কাপড় তৈরি হয় সেটা দেখার জন্য।
তথ্য ও চিত্রঋণ
শাওন আকন্দ, বাংলাদেশের তাঁতশিল্প, দেশাল, ঢাকা, ২০১৮।