প্রতিদিন আয়নায় দেখেন মুখ। সেই পরিচিত জন। নিজেকে দেখতে আনন্দ সবার হয়। কিন্তু প্রতিদিন নিজেকে দেখতে দেখতে কিছু নজর এড়িয়ে যাচ্ছে না তো? সন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে ডিটেকটিভের চোখে দেখেন। এভাবে দেখলেই পাবেন স্বাস্থ্যের সুলুক সন্ধান
চোখ–মুখ কি একটু হলদেটে?
হতে পারে তা জন্ডিসের লক্ষণ। আমাদের রক্তের লোহিতকণিকার আয়ু ১২০ দিন। এরপর এরা ভাঙে আর বেরিয়ে গেলে জমে বর্জ্য। এর একটি হলো এক রঞ্জক, এর নাম বিলিরুবিন। যদি বেশি বিলিরুবিন আসে রক্তে, তাহলে হলদে হতে পারে ত্বক।
শিশু যদি সময়ের আগে জন্ম নেয়, তাহলে বিলিরুবিন রক্তে বেশি আসে, এটা স্বাভাবিক কারণ, তখনো যকৃত পুষ্ট থাকে না। আবার কিছু দিন পর ঠিক হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা শিশুকে দেন ফটোথেরাপি। পূর্ণবয়স্কদের জন্ডিস এখন অনেক সময় বেশ সমস্যা করে। ভাইরাল হেপাটাইটিস, যকৃতে সমস্যা, পিত্তথলির সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা, হলদে আভা বেশি হলে রক্তে বিলিরুবিনের মান দেখে নিন। আর চিকিকসকের পরামর্শ নিন।
তিল বা আঁচিল
অনেক সময় তিল বিউটি স্পট। প্রিয়ার গালের তিলের জন্য সমরখন্দ বখরা দেওয়ার কথা এসেছে কবিতায়। তবে তিল থেকে আঁচিল আর এতে পরিবর্তন হলে নজরে রাখবেন। এই তিল বা আঁচিলে কি অসমতা এসেছে? এর সীমানা কি খাঁজকাটা? রঙে কোনো পরিবর্তন? আকারে একটা মটরশুঁটি থেকে কি বড়? গত কয়েক হপ্তা থেকে কি বাড়ছে? উত্তর হ্যাঁ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
আছে কোনো ক্ষত?
ঠোঁটে–মুখে হতে পারে কোল্ড সোর। ঠান্ডা জ্বরে হয়। অনেকে বলেন জ্বর ঠুয়া বা ঠোসা। হারপিস ভাইরাসের প্রভাব। জ্বর হলে, অসুস্থ হলে, বেশি ক্লান্তিতে বেরোয় এই ঠোসা। এমনি এমনি চলে যাবে, তাই অযথা খোঁটাবেন না।
ঠোঁট ফাটছে কি
শীতে অনেকের ঠোঁট শুকায়, ফাটে। বাম লাগাবেন, গ্লিসারিন ভালো হবে। তবে অনেক সময় ঠোঁট শুকায় পানিশূন্যতা হলে আর স্টেরয়েড ওষুধের প্রভাবে। অ্যালার্জিও হতে পারে। তাই আয়নায় নজর রাখুন।
মুখে প্রজাপতি র্যাশ
বেশির ভাগ র্যাশ বা ফুসকুড়ি নিরীহ। এমনিতে অস্বাভাবিক চলে যায় আবার কিছু আছে গুরুতর। মুখে র্যাশ প্রজাপতির আকার নিলে তা হতে পারে লুপাস ধরনের অসুখের জন্য। চিকিৎসকের কাছে যাবেন। এটা এমন রোগ, যা দেহের প্রতিরোধব্যবস্থা আক্রমণ করে। আক্রান্ত করে শরীরের টিস্যু সঙ্গে জ্বর, গিঁটে ব্যথা, ঠান্ডায় আঙুল নীল হয়ে যায়, এতেও চিকিৎসক দেখাতে হবে।
অস্বাভাবিক স্থানে লোম
চাই না, এমন স্থানে চুল গজাল। বয়স হলে পুরুষের কানে আর চোখে, নারীদের চিবুকে লোম হতে পারে। তরুণীদের মুখে লোম হলে ডাক্তার দেখাবেন, হতে পারে পিওএস।
মুদে আসা চোখের পাতা
বিগানের ভাষায় টোসিস। অক্ষি পুট মুদে আসা। এক বা দুটি চোখে হতে পারে। চোখের দৃষ্টি ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এতে ভাবনা নেই, তবে ডাবল ভিশন হলে মাথা ধরা, গলাব্যথা হলে চিকিৎসক দেখাবেন।
মুখের একদিক যায় না নড়ানো
শরীরের এক পাশ নড়াতে সমস্যা হলে নেবেন চিকিৎসাসহায়তা। তবে এমনি মুখ বেঁকে গেলে হতে পারে বেলস পলসি। অনেক সময় ভাইরাস যদি আক্রমণ করে, এমন স্নায়ু যা মুখের পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। আর ফুলে যায় মুখ। চোয়ালে বা কানের পেছনে যদি ব্যথা হয়। চলে যায় এমনি তিন থেকে ছয় মাসে।
মুখের পক্ষাঘাত, সঙ্গে অন্য সমস্যা
মগজের এক অংশে রক্ত চলাচল কমে গেলে বা বন্ধ হলে হয়তো একটি রক্তনালি বিদীর্ণ হলো বা রুদ্ধ হলো। এ থেকে হতে পারে স্ট্রোক। যদি দেখা যায় মুখের নিচের অংশ পারালাইসিস, বাহুতে অথবা পায়ে অবশ ভাব, চেতনা নেই, দুর্বল, কথা জড়িয়ে আসছে, মাথা ঝিমঝিম, গিলতে অসুবিধা, দ্রুত রোগী নিয়ে যান জরুরি বিভাগে।
চোখ ফোলা ফোলা
চোখের নিচের পরিসরে তরল জমে ফোলা ফোলা হয়। গরম, আর্দ্র জলবায়ুতে শরীর বেশি জল ধরে। রাতে ঘুম কম হলে, খুব বেশি নোনা খাবার খেলে, হরমোনের কারণে এমন হতে পারে। চোখ লাল আর চুলকানি হলে হতে পারে অ্যালার্জি। পরাগ রেণু, মেকআপ, খাবার এসব কারণে অ্যালার্জি থাকে অনেকের। পিংক আই হতে পারে সংক্রমণ হলে।
কেশ বা লোমহানি
ভ্রু বা চোখের পাতা হানি হলে, অন্যত্র কেশ পড়লে এল পেসিয়া। দেহের ইম্মুন ব্যবস্থা বিদ্রোহী হয়ে কেশবৃন্ত আক্রমণ করলে ঝরে যেতে পারে। একে প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন কেশ গজানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না সে জন্য।