বিশাল পরীক্ষার হলটা একেবারেই সুনসান। কারও মুখে কথা নেই। সবাই ডুবে ছিল গণিতে। আমিও। পরীক্ষার হল বললেই আমাদের মনের মধ্যে যে ছবিটা ভেসে ওঠে, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের এই পরীক্ষার মঞ্চ একেবারেই সে রকম নয়। কারণ গণিতের রোমাঞ্চে একবার ডুবে গেলে তখন আর নম্বর, পদক, এত কিছু মাথায় থাকে না। ১১২টি দেশের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে, এক ছাদের নিচে যে পরীক্ষায় অংশ নেয়, সেটা তো শুধু পরীক্ষা নয়। বিশ্বের নানা দেশের সংস্কৃতির একটা মিলনমেলাও। সাড়ে চার ঘণ্টার দীর্ঘ পরীক্ষা, তা-ও পরপর দুই দিন। কাগজ, কলম, চকলেট, পানি নিয়ে আমরা ঢুকে পড়েছিলাম পরীক্ষার হলে। এই সাড়ে চার ঘণ্টার জন্যই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি কয়েক মাস ধরে।
>ইংল্যান্ডে এ বছর অনুষ্ঠিত ৬০তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে ঢাকার এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজের ছাত্র এম আহসান আল মাহীর। সে লিখেছে এবারের অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা
১১ থেকে ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যের বাথ শহরে বসেছিল আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ৬০তম আসর। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছি আমরা ছয়জন—আমি, ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সৌমিত্র দাস, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের আহমেদ ইত্তিহাদ হাসিব, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের মো. মারুফ হাসান রুবাব, ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দেওয়ান সাদমান হাসান এবং ঢাকার নটর ডেম কলেজের মাশরুর হাসান ভূঁইয়া। একেবারেই নতুন দল নিয়ে গত বছরের তুলনায় আমাদের ফল খুব ভালো হয়নি। একটি ব্রোঞ্জ, চারটি ‘অনারেবল মেনশন’ পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। আক্ষেপ আছে। তবু না পাওয়াকে বড় করে না দেখে আমরা অর্জনটাকে অনুপ্রেরণা করেই সামনের দিকে তাকাতে চাই।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বলি। পরীক্ষার আগে ও পরে আমাদের পরিচয় হয়েছে অন্য অনেক দেশের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। আলবেনিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, ইতালি, অস্ট্রেলিয়ার দলের সদস্যদের সঙ্গে তো বেশ বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। শুরুর কয়েকটা দিন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা সময়টা আরও বেশি উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি।
‘ওপেন মাইক’ বলে একটা অংশ ছিল আইএমওর এবারের আয়োজনে। মাইক্রোফোন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য। যে যা খুশি বলতে পারে, গাইতে পারে। আমি, ইত্তিহাদ আর সাদমান মিলে গেয়ে ফেললাম কুইন ব্যান্ডের গান, ‘উই উইল রক ইউ’। সবাই যখন আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইতে শুরু করল, দারুণ লাগছিল!
পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা আশপাশটা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি দেখতে গিয়েছিলাম। তখন অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তবু খুব ভালো লেগেছে। গণিত বিভাগের লাইব্রেরিটা কত্ত বড়! দেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাটা আরও প্রবল হলো।
গত কয়েক মাস কেবল গণিত অলিম্পিয়াডেরই প্রস্তুতি নিয়েছি। ফল যা-ই হোক, দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ফিরেছি। লেখাপড়ায় আরও মন দেওয়ার উৎসাহ পেয়েছি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি, আগামী বছর আমরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে আরও ভালো ফল নিয়ে আসতে পারব।
(অনুলিখিত)