শীতের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। দিন শেষে বাসায় ফিরছেন হয়তো রাস্তার হালকা ঠান্ডা হাওয়া খেতে খেতে। কিন্তু বাড়ি ঢুকে ঠান্ডা মেঝেতে পা রাখতে কি ভালো লাগে? সারা দিন গরম থাকলেও কিন্তু বিকেলের পর একটু ঠান্ডাই লাগে। এই সময়টায় ঘরের মেঝের ঠান্ডা বাঁচিয়ে চলতে অনায়াসে মেঝের ওপর রাখতে পারেন বাহারি নকশার শতরঞ্জি। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে—একে তো ঠান্ডা থেকে বাঁচবেন, তার ওপর ঘরের সৌন্দর্যও বেড়ে যাবে অনেক গুণ।
ঘরের যে জায়গাটুকুতে হাঁটাচলা বেশি হয়, সেখানে শতরঞ্জি বিছিয়ে দিন। মেঝের ঠান্ডা থেকে পা দুটো রেহাই পাক। পরিবারের শিশু ও প্রবীণ সদস্যদের প্রতি লক্ষ রাখতে হয় আরও বেশি। সে ক্ষেত্রে পুরো ঘরেই শতরঞ্জি বিছিয়ে দিতে পারেন। প্রবীণেরা রঙের প্রতি উদাসীন হলেও শিশুদের ঘরটা হওয়া চাই রঙে রঙিন—আকর্ষণীয়।
ডাইনিং টেবিলও সাজানো যেতে পারে শতরঞ্জি দিয়ে। তবে টেবিলজুড়ে শতরঞ্জি না বিছিয়ে শুধু প্লেট, গ্লাস, বাটি ইত্যাদি রাখার জন্য ছোট ছোট আকারের শতরঞ্জি ব্যবহার করুন। বেডরুমের খাটের পাশে কিংবা বসার ঘরের মাঝখানে বিছানো বড় আকারের শতরঞ্জি বেশ মানানসই।
আকারে চারকোনা, আয়তাকার, বৃত্তাকারসহ ছোট-বড়, লম্বাটে বিভিন্ন আকারের হতে পারে। প্রতিটি শতরঞ্জিতেই থাকছে অনেক রঙের সুতার মিশেলে বাহারি সব নকশা করা। ঘরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গার জন্য বেছে নিতে পারেন পৃথক ধরনের বিভিন্ন ডিজাইনের শতরঞ্জি।
গোড়ার কথা
রংপুর শহর থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের ছোট্ট একটি গ্রাম; নাম নিসবেতগঞ্জ। আগে যার নাম ছিল পীরপুর। তবে বয়সে প্রবীণেরা ছাড়া এ নামে কেউ আর এখন গ্রামটিকে চেনে না। ১৮২৭ কি ১৮৩০ সালের দিকে পীরপুরে এসেছিলেন এক ব্রিটিশ সাহেব—মি. নিসবেত। রংপুরের তৎকালীন কালেক্টর। শহরের খুব কাছে পীরপুর গ্রামের শতরঞ্জি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। শতরঞ্জির গুণগত মানোন্নয়ন এবং এ শিল্পের প্রসারে সহযোগিতা করেন কালেক্টর। তাঁর সহযোগিতার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পীরপুর গ্রামের নাম রাখা হয় ‘নিসবেতগঞ্জ’। এমনি করে সাত সমুদ্রের ওপারের এক মানুষ বেঁচে রইলেন বাংলাদেশের এক গ্রামে। পুরো গ্রামটির নাম নিসবেতগঞ্জ হলেও এর একটি পাড়ার নাম শতরঞ্জিপাড়া। এখানে এখনো তৈরি হয় শতরঞ্জি। তা ছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাইরকাটারি, পায়রাবন্দ, মাহিগঞ্জ, তাজহাট, বখতিয়ারপুর, বানিয়াপাড়া আর পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কিছু মানুষ। শতরঞ্জিপাড়ায় বর্তমানে শতরঞ্জি তৈরি হয় কটন ও মখমল সুতা দিয়ে। তবে পাটের তৈরি শতরঞ্জিও তৈরি হচ্ছে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতেও শতরঞ্জির প্রচলন ছিল খুব। রাজা-বাদশাদের গৃহে এর ব্যাপক কদর ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের দরবারে শতরঞ্জি ব্যবহার করা হতো বলে ইতিহাস থেকে প্রমাণ মেলে। জমিদার-জোতদারদের ভোজের আসন হিসেবে শতরঞ্জি ব্যবহারের কথা শোনা যায়। সে সময়ে রাজা-বাদশা, বিত্তবানদের বাড়িতে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে শতরঞ্জি ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশ শাসনামলে এটি এত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এখানকার তৈরি শতরঞ্জি ভারতবর্ষ, বার্মা, সিংহল, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো।
যেমনটা পাওয়া যায়
শতরঞ্জি পণ্যের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বাথ ম্যাট, ডোর ম্যাট, ক্লেস ম্যাট, টেবিল ম্যাট, ওয়াল ম্যাট, ফ্লোর কাভারিং ম্যাট ও অন্যান্য ঘর সাজানোর সামগ্রী। নকশা ও মাপের শতরঞ্জি ছাড়াও পাপোশ, সম্পূর্ণ হাতে বোনা ও পরিবেশবান্ধব এসব পণ্যের মূল্যও সবার হাতের নাগালে।
দরদাম
পণ্যের আকার-আকৃতি, রং ও নকশার ওপর ভিত্তি করে দামের হেরফের হয়। সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে শতরঞ্জির পণ্যের মূল্য শুরু। উলের শতরঞ্জি ৫০০ থেকে ১০০০০ টাকা, চ্যানেলের কার্পেট ২৫০ থেকে ৩০০০, ঝুট ও পাটের তৈরি কার্পেট ২০০ থেকে ২০০০, আর শুধু ঝুটের কার্পেট রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
পাপোশের দামটা মূলত নির্ভর করে এটি কী দিয়ে তৈরি আর তার আকারের ওপর। প্লাস্টিক ও রাবারের বুটিওয়ালা পাপোশের দাম ২৫০-৮০০ টাকা, কৃত্রিম তন্তুর পাপোশের দাম ৫০০-১২০০ টাকা, নেট পাপোশ ১৫০-৭০০ টাকা, গেঞ্জি পাপোশ ৫০-১২০ টাকা, পাটের পাপোশ ৫০-১৫০ টাকা। আমদানি করা মিসরের তৈরি বিভিন্ন সাইজের নাইলনের পাপোশের দাম ১০০-৪০০ টাকা, সুতার তৈরি পাপোশ ২০০-২০০০ টাকা, চীনের তৈরি রাবারের পাপোশ ২৫০-৪০০ টাকা।
ছয়টি পিসের এক সেট টেবিল ম্যাট ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঁচ পিসের ১২৫ থেকে ৬৫০ টাকা ও চার পিসের সেটের মূল্য পড়বে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। ওয়াল ম্যাট রয়েছে ৫৭০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে।
কোথায় পাবেন
নিউমার্কেট, গাউছিয়া, রাজধানী সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন মার্কেট এবং ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে নিতে পারবেন আপনার পছন্দসই শতরঞ্জি।