আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দিতে না পারার কারণেই মিরসরাই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। একই অবস্থা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদেও। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এমন আলোচনা চলছে উপজেলার ভোটারদের মধ্যে। ফলাফল বিশ্লেষণ করেও পাওয়া গেছে একই চিত্র।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী ৫৬ হাজার ১৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭১৩ ভোট। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী মিলে ১১ হাজার ৫৩৪ ভোট বেশি পেয়েছেন। ভোটের এ হিসাব দেখে ভোটাররা মনে করেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকলে এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল না।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৫৩ ভোট। সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, ২৪ হাজার ৭৬০ ভোট। স্থানীয় লোকজনের মতে, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের জনপ্রিয়তা থাকার পরও শেখ আতাউর রহমান প্রার্থী হওয়ায় গিয়াস উদ্দিনকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
নির্বাচনে শেখ আতাউর রহমান গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অপরদিকে, গিয়াস উদ্দিনকে সমর্থন দেন উত্তর জেলা ও বিভাগীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। নির্বাচনের আগে এই দুই প্রার্থী নিয়ে আলোচনা ছিল বেশি। অথচ অপেক্ষাকৃত কম আলোচনায় থাকা বিএনপি প্রার্থীই জয় নিয়ে ঘরে ফিরেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দুজন। এই দুজন মিলে পান ৬২ হাজার ৮৪৫ ভোট। অথচ বিএনপির প্রার্থী মইনুদ্দিন মাহমুদ তাঁদের চেয়ে ১৭ হাজার ৪৩ ভোট কম অর্থাৎ ৪৫ হাজার ৮০২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। শুধু মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। তিনজনই ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাস্টার রফিকুজ্জামান প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার চিঠিতে নির্দেশনা ছিল চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী দিতে হবে। কিন্তু কোনো পদেই মন্ত্রী একক প্রার্থী দিতে পারেননি। মন্ত্রীর এই ব্যর্থতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন এসব বলে লাভ কী? দুইজন দাঁড়িয়ে তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমি নির্বাচনকালে ১৫ দিন অসুস্থ ছিলাম। এর মধ্যে দুইজন দাঁড়ানোতে এ অবস্থা হয়েছে।’
নির্বাচনের দিনও বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী একে-অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে মন্ত্রীর সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। এ বিষয়ে পরাজিত নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রী তাঁর ছেলেকে মিরসরাই উপজেলায় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে সভানেত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন। এ রকম অনেক প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
অপরদিকে শেখ আতাউর রহমানের অভিযোগ, ‘গিয়াস উদ্দিন শুধু মিথ্যা কথা বলছেন। আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।’