সাক্ষাৎ​কার

মিডওয়াইফদের জন্য কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

>

দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সদের পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার মিডওয়াইফরা কাজ করছেন। তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ বিভিন্ন রোগীর সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁরা মাতৃস্বাস্থ্য ও কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের উন্নয়নেও কাজ করছেন। মিডওয়াইফারি পেশা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছাব্বের হোসেন

কাজী মোস্তফা সারোয়ার
কাজী মোস্তফা সারোয়ার

প্রথম আলো: মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে পেশাদার মিডওয়াইফদের ভূমিকা কেমন?
কাজী মোস্তফা সারোয়ার: মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে পেশাদার মিডওয়াইফদের ভূমিকা ব্যাপক। তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রসবপূর্ব সেবাদানের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ প্রসব নির্ণয় করেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। মিডওয়াইফরা স্বাভাবিক প্রসবে সহায়তা এবং নবজাতকের যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করেন। প্রসব-পরবর্তী জটিলতা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেন এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করেন। এ ছাড়া মিডওয়াইফরা কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা দেন এবং বাল্যবিবাহকে নিরুৎসাহিতকরণে ভূমিকা রাখেন।
প্রথম আলো: আগামী পাঁচ বছরে মিডওয়াইফদের জন্য আপনার লক্ষ্যগুলো কী?
কাজী মোস্তফা সারোয়ার: আগামী পাঁচ বছরে মিডওয়াইফদের ক্যারিয়ার প্ল্যান তৈরি করা এবং এর সবগুলো বাস্তবায়ন আমার মূল লক্ষ্য। মিডওয়াইফ সার্ভিসের মান উন্নয়নের জন্য তদারককারী কর্মকর্তার পদ সৃষ্টিসহ মিডওয়াইফারি শিক্ষক এবং অধিদপ্তরের জন্য আলাদা পরিচালক ও উপপরিচালকের পদ সৃজন করা। ভবিষ্যতে নার্সিং শিক্ষার মতো বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি এবং মাস্টার্স কোর্স চালু করা আমার একটি লক্ষ্য। তা ছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতে মিডওয়াইফারি সেবা নিশ্চিত করা।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধাগুলো কী?

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধাগুলো হলো—

ক.  গর্ভবতী মা ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত তথ্যবিষয়ক অসচেতনতা।

খ.  প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবার ভীতি, আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব।

গ.  স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে ভীতি ও শঙ্কা।

ঘ.  স্বাস্থ্যসেবায় গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব।

প্রথম আলো: প্রজননস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফদের আত্মনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: প্রজননস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফদের আত্মনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত মিডওয়াইফদের আবাসনব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া মিডওয়াইফারি পেশাকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে গ্রহণে উৎসাহিত করাসহ উত্তম কাজের পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে দেশে-বিদেশে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম আলো: বাধাগ্রস্ত প্রসবের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফরা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন বলে আপনি মনে করেন কি?

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: হ্যাঁ, বাধাগ্রস্ত প্রসবের ক্ষেত্রে মিডওয়াইফরা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন বলে আমি মনে করি। প্রসবের সময় মিডওয়াইফরা প্রসবের অগ্রগতি বুঝতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুততম সময়ে যথাযথ স্থানে রেফার করেন। মিডওয়াইফদের বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। সঠিক সময়ে রেফার করার সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন করার ফলে মা ও নবজাতকের প্রাণ রক্ষা পায়।

প্রথম আলো: মিডওয়াইফরা যাতে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে জন্য সবচেয়ে কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন?

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: মিডওয়াইফদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যাতে তাঁরা ঠিকমতো পালন করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অন্যান্য স্বাস্থ্যটিমের সদস্যদের সহযোগিতা যাতে মিডওয়াইফরা পান তা নিশ্চিত করতে হবে। কমিউনিটিতে মিডওয়াইফদের কাজ বা সেবা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্যের ব্যাপারে আপনার প্রত্যাশা কী?

কাজী মোস্তফা সারোয়ার: কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে মা ও শিশুস্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া; যাতে একজন মা-ও মাতৃকালীন প্রসব জটিলতায় আর মৃত্যুবরণ না করেন এবং নবজাতকের জীবন রক্ষা পায়। পরিশেষে, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এজন্য যে, তিনি মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে পেশাদার মিডওয়াইফদের শিক্ষা ও পদ সৃজন করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশকে মা ও শিশু স্বা​েস্থ্যর সুরক্ষার জন্য একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন। আমি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলকেও (ইউএনএফপিএ) ধন্যবাদ জানাতে চাই—এমন একটি বাংলাদেশ গড়ায় সরকারকে সহায়তা করছে, যেখানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কোনো নারীর মৃত্যু যেন না হয়। যেখানে সবাই প্রজননস্বাস্থ্যসেবা ও অধিকার ভোগ করবে এবং মেয়ে ও নারীরা সহিংসতামুক্ত জীবনযাপন করতে পারবেন।