আমাদের দেশের মায়েরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে কতটা সচেতন? বেশির ভাগ পরিবারেই দেখা যায়, নারীরা পরিবারের সব সদস্যের খেয়াল রাখতে পারেন—শুধু নিজের ব্যাপারে যত্নের প্রতি উদাসীন। এর পেছনে কাজ করে নানান ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। এরপরও দিন বদলেছে, নারীরা বর্তমানে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই সচেতন। চিকিৎসাব্যবস্থাও আরও উন্নত হয়েছে। ফলে যেসব রোগে আগে মানুষ মারা যেত, সেগুলো এখন সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগ প্রতিরোধে অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে ভ্যাকসিন বা টিকা। ভ্যাকসিন বা টিকার মাধ্যমে বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমছে।
চিকিৎসকেরা বলেন, প্রতিটি মায়ের জন্যই নিয়মিত কিছু টিকা নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুরক্ষায় টিটেনাস টিকা নেওয়া আবশ্যক। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুসারে এখনো সারা বিশ্ব প্রতি নয় মিনিটে একজন নবজাতক শিশু মারা যায় টিটেনাসের কারণে। তাই মা ও শিশুর সুরক্ষার জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ২৭ থকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যেই টিটেনাস টিকা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বাংলাদেশে ৩ থকে ৫ শতাংশ গর্ভবতী মা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বহন করেন, যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় ফ্লুর কারণে মা এবং গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হয়। তাই গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি এবং ফ্লুর ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। আবার কিছু ভ্যাকসিন আছে, যেগুলো গর্ভাবস্থার পূর্বেই দেওয়া উচিত, যেমন রুবেলা ভ্যাকসিন ও জরায়ুর ক্যানসার ভ্যাকসিন। রুবেলা ভাইরাসের সংক্রমণে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। সুস্থ শিশু নিশ্চিত করার জন্য মাকে অবশ্যই গর্ভাবস্থার পূর্বেই রুবেলা ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নিতে হবে। প্রতিবছর প্রায় তিন লাখের বেশি নারী জরায়ু ক্যানসারে মারা যান। জরায়ুর ক্যানসার সচেতনতা এবং ভ্যাকসিন মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। বাংলাদেশে টিকা এখন বেশ সহজলভ্য। বর্তমানে বাংলাদেশেই এ ধরনের টিকা কর্মসূচি পালিত হয়।
একটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত ইপিআই এবং অন্যটি বেসরকারি টিকাদান কর্মসূচি। আগে সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রম পরিচালনায় সব ধরনের ভ্যাকসিন আমদানি করা হতো, কোনো ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হতো না। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হতো, প্রয়োজনের সময় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাওয়া যেত না এবং আমদানি করা ভ্যাকসিন সংরক্ষণে অসুবিধা হতো। আশার খবর হলো এখন দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করে ইনসেপটা ভ্যাকসিন লিমিটেড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি নিয়মনীতি অনুসরণ করে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। ইনসেপটা ভ্যাকসিন লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৮০ মিলিয়ন ডোজের বেশি। ইনসেপটা বর্তমানে টিটেনাস ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস বি, ফ্লু, মিজেলস-রুবেলা, টাইফয়েড, র্যাবিস, হেপাটাইটিস এ, মনেনিগোকোক্কাল, টিটেনাস ইমিউনোগেন্টাবিউলিন, র্যাবিস ইমিউনোগেন্টাবিউলিন, সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভেনম তৈরি করছে। ভবিষ্যতে পোলিও, নিউমোনিয়া, কলেরাসহ আরও অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরকিল্পনা আছে এ প্রতিষ্ঠানের। ঢাকার ধানমন্ডিতে ইনসেপটার সহযোগিতায় একটি ভ্যাকসিন সেন্টার রয়েছে। সেখানে ইনসেপটার সব ভ্যাকসিন পাওয়া যায় এবং দক্ষ নার্স দ্বারা ভ্যাকসিন দেওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া সারা দেশে ২৩টি সেলস সেন্টারে কোল্ড রুমের ব্যবস্থা আছে, যেখানে ইনসেপটার উৎপাদিত সব প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সহজলভ্য করতে যত্নের সঙ্গে মজুত রয়েছে।