মণিপুরিদের ঐতিহ্য যে জাদুঘরে

মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সাজানো দুটি ভাস্কর্য।
মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সাজানো দুটি ভাস্কর্য।

‘চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিউজিয়াম’। মণিপুরি জাদুঘরের এটাই পোশাকি নাম। ফটক পেরিয়ে ভেতরে যেতেই স্বাগত জানালেন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা হামোম তনুবাবু।

হামোম তনুবাবুর নিজ বাড়ির চারটি ঘর নিয়ে এই জাদুঘর। প্রথম ঘরে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা মণিপুরি নারী-পুরুষের ভাস্কর্য। পাশে মণিপুরিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দ্বিতীয় ঘরে রাধাকৃষ্ণের ভাস্কর্য। সঙ্গে পূজায় ব্যবহৃত কাঁসার তৈরি তৈজস, শঙ্খ ইত্যাদি। তৃতীয় ঘরটি একটু বড়। এখানে রয়েছে সোনা, রুপা এবং বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থে তৈরি মণিপুরি মেয়েদের ব্যবহার্য গয়না ও সাজসজ্জার উপকরণ, তাঁতে কাপড় বুননের সরঞ্জাম, তাঁতে বোনা বিভিন্ন রং ও নকশার শাড়ি, গামছা, শালসহ উৎসবের পোশাক, গ্রামোফোন, বিভিন্ন ছবি ইত্যাদি। আরও আছে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা মুণিপুরিদের ভাস্কর্য।

মণিপুরি সম্প্রদায়ের মানুষের ব্যবহৃত নানা উপকরণ

চার নম্বর ঘরে সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি। প্রাচীন যুগে মণিপুরিদের নিত্যব্যবহার্য কাঁসা-পিতলের কলস, জগ-গ্লাস, মগ, থালাসহ খাবার রাখার বিভিন্ন পাত্র, বাঁশ ও বেতের তৈরি ঝুড়ি, চালুনি, ডালা, খলই, ছাতা, হাতপাখা, টুপি, মাছ ধরার দুওড়, পলো, শুকনো খাবার রাখার পাত্র, কাঠের তৈরি চিরুনি, বসার টুল, কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ, ঢোল, তবলাসহ প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি। রয়েছে মণিপুরিদের নিজস্ব বর্ণমালার চার্ট, যুদ্ধের অস্ত্র, মণিপুরি ভাষার বই, তামাক খাওয়ার পাত্র ইত্যাদি। এসবের অনেক কিছুই এখন বিলুপ্তপ্রায়। জাদুঘরে ১১৬ ধরনের ১৭১টির বেশি নিদর্শন রয়েছে।

সংগ্রহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে হামোম তনুবাবু বললেন, ‘মণিপুরিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব জিনিস সংগ্রহ করেছি। অনেকে দিতে চাইতেন না। একেকজনের কাছে বারবার যেতে হয়েছে। বুঝিয়েছি, সংগ্রহ বেহাত হবে না। তবে সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে জাদুঘরটি আরও সমৃদ্ধ করতে পারতাম।’

তনুবাবুর এই জাদুঘর সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। এই জাদুঘরে প্রবেশে কোনো ফি দিতে হয় না।