পড়ার সময় অনেকের চোখেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসে। অনেকে আবার চোখে ঘুম আনতে ওষুধও খান। রাতের পর রাত কিছুতেই কারও চোখে ঘুম আসে না। ঘর অন্ধকার করে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সচল করেও চোখে ঘুমের দেখা নেই। কোভিড–১৯ আক্রান্ত অনেকেরই ঘুমের সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। ভালো ঘুমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুস্বাস্থ্যের বিষয়টিও। তাই ঘুম যাঁদের কাছে বহু আরাধ্য একটি বিষয়, তাঁরা যোগাসন করে দেখতে পারেন।
কীভাবে করবেন
ডান হাতকে তুলে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা নাকের ডান দিকের ছিদ্র (পিঙ্গলা নাড়ি) বন্ধ করে নাকের বাঁ ছিদ্র (ইড়া নাড়ি) দিয়ে শ্বাস টেনে নিন। শ্বাস ফুসফুস ভরে নিতে হবে। এরপর অনামিকা বা মধ্যমা অথবা এ দুটি আঙুল একযোগে করে নাকের বাঁ ছিদ্র বন্ধ করে ডান পাশের ছিদ্র দিয়ে পুরোটা শ্বাস বের করে দিন। এরপর ওই বাঁ ছিদ্র দিয়েই শ্বাস টেনে নিন। শ্বাস টানার পর আঙুল পরিবর্তন করে নাকের ডান ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন। আবার একইভাবে নাকের বাঁ ছিদ্র দিয়ে শ্বাস টেনে নিন। এই ধারাবাহিকতা যাতে ভুল না হয়, সে জন্য মনে রাখবেন, যখন শ্বাস ফুসফুসে ভরবেন, তারপরই আঙুল পরিবর্তন করে নাকের অন্য ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়বেন। এভাবে চলতে থাকবে। অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম বিভিন্ন গতিতে আপনি করতে পারবেন। তবে ঘুমের ক্ষেত্রে প্রাণায়ামটি খুব ধীরগতিতে করবেন। শ্বাসের গতি এত ধীরে করবেন যেন আপনার নিজের শ্বাসের শব্দ আপনি নিজেও শুনতে না পান। চেষ্টা করবেন ৮ থেকে ১৬ সেকেন্ডে একবার শ্বাস নিতে ও একই পরিমাণ সময় ধরে আবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ার। চাইলে সময় আরও বাড়াতে পারেন। যখন অনুলোম-বিলোম করবেন, তখন সব মনোযোগ শ্বাসের গতিপথের দিকে দিবেন। বাঁ হাত কোলের ওপর স্থির রেখে শুধু ডান হাত দিয়ে অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম করবেন। অনুলোম-বিলোম প্রাণায়ামে বাঁ হাত ব্যবহার করবেন না।
সময়কাল
প্রতিদিন ঠিক ঘুমানোর আগে কমপক্ষে ৫ মিনিট করুন। ঘুমের সমস্যা বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট করুন। ২১ থেকে ২৮ দিন টানা করবেন। অনিয়মিত অভ্যাসে ঠিকমতো উপকার পাবেন না।
কীভাবে করবেন
সুখাসন বা সিদ্ধাসনে ধীরস্থিরভাবে বসুন। দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কান বন্ধ করবেন। বাকি চারটা আঙুল চোখের পাতার ওপর এমনভাবে রাখুন যাতে আঙুল চোখের পাতায় স্পর্শ না লাগে। চোখ এমনিতেও বন্ধ থাকবে। এভাবে আমাদের দুটি ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ ও কান বন্ধ হয়। এরপর নাক দিয়ে বুকভরে শ্বাস টেনে নিন এবং মুখ বন্ধ রেখে শ্বাস ছাড়ার সময় ভ্রমরের মতো নিরবচ্ছিন্ন আওয়াজ করতে করতে শ্বাস ছাড়ুন। ভ্রমরের মতো আওয়াজ করতে হয় বলে একে ভ্রামরী প্রাণায়াম বলে। ভ্রামরী প্রাণায়ামের সময় মনোযোগ দুই ভ্রুর মধ্যে স্থির রাখবেন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ১১ থেকে ২১ বার করুন।
উপকারিতা
ঘুমের জন্য চমৎকারভাবে কাজ করে। নিয়মিত অভ্যাসে মানসিক টেনশন, উত্তেজনা, উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস পায়।
কীভাবে করবেন
ঘুমানোর আগে বিছানার ওপর বা মেঝেতে ম্যাটের ওপর চিত হয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুটো পায়ের গোড়ালিকে হাঁটু থেকে মুড়ে নিতম্বের কাছে রাখুন। দুটো পায়ের মধ্যে দেড় ফুটের মতো ফাঁক রাখুন, দুটো হাতকে কাঁধ বরাবর টানটান করে রাখুন। এবার ডান হাঁটুকে ডান দিকে ঝুঁকিয়ে মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে দিন। এতটা ঝোঁকান, যাতে বাঁ হাঁটু ডান পায়ের পাতার কাছে পৌঁছে যায় এবং বাঁ হাঁটুকেও ডান দিকে ডান গোড়ালির কাছে বিছানা বা ম্যাটের সঙ্গে ঠেকিয়ে দিন। ঘাড়কে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে রাখুন। এভাবে একদিকে ঘোরার সময় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাঝে যাবেন। আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে একদিকে আসনটি করার পর অন্য দিকেও আসনটি করুন।
সময়কাল
একেক দিকে ১৫ সেকেন্ড করে করবেন। ডান দিক ও বাঁ দিক মিলিয়ে একসেট হলে মোট ৩-৫ সেট করুন।