অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা পড়তে চান, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস (ডিএসসিই) শুধু তাঁদের জন্যই। পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি এবং উদ্যোক্তা অর্থনীতি—এই তিন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত এই প্রতিষ্ঠানে। রাজধানীর ইস্কাটনে ২০১০ সালে চালু হয়েছে এর কার্যক্রম। শুরুতে স্নাতকোত্তর, পরে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় স্নাতকের ক্লাস। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে জানালেন, পূর্বাচলে হবে তাঁদের স্থায়ী ক্যাম্পাস।
অর্থনীতি যাঁদের পাঠ্য, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পাঠাগারটা তাঁদের পছন্দ হওয়ারই কথা। সব কটি বুকশেলফই অর্থনীতির বইয়ে ঠাসা। স্নাতকের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, ফারাবী ফাইয়াজ, তাসনোভা হালিমদের ক্যাম্পাসজীবনের একটা বড় সময় কাটছে এখানে।
ক্যাম্পাস ছোট বলে শিক্ষার্থীদের সীমানাটাও ছোট, এমন ভাবলে ভুল হবে। পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা আফরোজ ও নাহিন মাহফুজ বলছিলেন তাঁদের নানা কার্যক্রমের কথা। দুজন ডিএসসিই এনভায়রনমেন্ট ক্লাব ও ডিএসসিই কুইজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্লাবের সদস্য। বিশ্ব পরিবেশ দিবস, বিশ্ব পানি দিবসে বিশেষ অনুষ্ঠানসহ আর্থ ফেস্টিভ্যাল ২০১৯-এর মতো আয়োজন করেছেন তাঁরা। প্রতিবছর দেশের বাজেট বিশ্লেষণ করা তাঁদের পাঠ্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অর্থনীতিবিষয়ক এই বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত। তাই শিক্ষার্থীরাই ডিএসসিইর বড় বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, সভা-সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা ক্যাম্পাসের নাম ছড়িয়ে দিতে চান।
উন্নয়ন অর্থনীতির শিক্ষার্থী ফারিয়া রহমান বলছিলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আমি উন্নয়ন অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছি। সামনের দিনগুলোতে নিশ্চয়ই এই খাতে বড় কাজের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা সংখ্যায় খুব বেশি না। তাই শিক্ষকেরা খুব যত্নসহকারে আমাদের পড়াতে পারেন। সারা দিন ক্লাস করলেও মনে হয় ক্লান্ত লাগবে না।’ ফারিয়াদের জন্য ডিএসসিইতে শিক্ষক আছেন ১৯ জন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। কেউ কেউ এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন মো. সানজেদুর রফিক। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করে তিনি এখানে ভর্তি হয়েছেন। পড়ার বিষয়টা তাঁর খুব পছন্দ। কী কী পড়ানো হয়, কেন তিনি স্নাতকোত্তরের জন্য এই বিষয় বেছে নিয়েছেন, ক্যাম্পাসে পড়ার পরিবেশ কেমন—সবকিছুই খুব আগ্রহ নিয়ে ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি মনে করি, তিনটি কারণে আমাদের পড়াশোনার মান ভালো। প্রথমত, সমসাময়িক বিষয়গুলোই শিক্ষকেরা পড়ানোর সময় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয় আমাদের ক্লাসে পড়ানো হয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের এখানে খুব মানসম্পন্ন সেমিনার হয়, সম্মেলন হয়। সফল উদ্যোক্তারা আসেন। আমরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারি। আর তৃতীয়ত, ফিল্ড ট্রিপগুলো খুব কার্যকর। বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কৃষকদের কাছেও আমরা গিয়েছি, শিখেছি।’ এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইকোনমিকস ক্লাব নামে ডিএসসিইর একটি সংগঠন আছে, সে কথাও বললেন তিনি।
ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস পরিচালনার দায়িত্বে আছেন অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও রেক্টর তিনি। পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি এবং উদ্যোক্তা অর্থনীতি—তিনটি বিষয়ই যে ভবিষ্যতের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে, সে কথা বেশ জোর দিয়ে বললেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য সারা বিশ্বেই বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে পরিবেশ অর্থনীতিবিদদের বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনেক দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। উদ্যোক্তা অর্থনীতির প্রয়োজন তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও বারবার উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক তরুণ এখন উদ্যোক্তা হতে চান। উদ্যোক্তা অর্থনীতি পড়েই যে উদ্যোক্তা হতে হবে তা নয়, কিন্তু পড়লে তাঁর জন্য সহজ হবে। উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়টিও আন্তর্জাতিকভাবে ভীষণ জরুরি। ব্যাংক, এনজিও, সরকারি পদগুলোতে উন্নয়ন অর্থনীতিতে পড়া দক্ষ লোকবল প্রয়োজন।
জানা গেল, ডিএসসিইতে স্নাতক করতে হলে খরচ পড়বে প্রায় তিন লাখ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে টিউশন ফিতে কিছু ছাড়ের সুযোগ আছে। এ ছাড়া স্নাতকোত্তরের খরচ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এখন স্নাতকে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। একেকটি বিষয়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে। ভর্তির আবেদন জমা দেওয়া যাবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ২২ ও ২৩ নভেম্বর। আবেদনের যোগ্যতা ও বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন dsce.edu.bd ওয়েবসাইটে।