১৯২১ সাল। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্টিমারে চেপে নারায়ণগঞ্জ এসে নামলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ভুলুবাবু নামের এক চায়ের দোকানদার কড়া ও হালকা লিকারের দুই কেটলি চা বানিয়ে থানায় চলে আসেন। ভুলুবাবু নেতাজির চা-প্রীতির কথা আগে থেকেই জানতেন। নেতাজি চা পান করে খুব প্রশংসা করলেন, সঙ্গে আশীর্বাদ। নেতাজির এমন আশীর্বাদ বিফলে যায়নি। ভুলুবাবুর ছোট্ট সেই চায়ের দোকান দিন দিন খ্যাতি পেয়ে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বোস কেবিন নামে। চলুন আজ আমরা প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বোস কেবিন থেকে ঘুরে আসি।
বোস কেবিনের পথ
ঢাকা থেকে ফতুল্লা হয়ে নারায়ণগঞ্জ যাওয়া যাবে। আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে কাঁচপুর সেতুর আগে ‘সাইনবোর্ড’ থেকে ডানের রাস্তা হয়েও নারায়ণগঞ্জ যাওয়া যাবে। চাইলে আপনি রেলগাড়িতেও যেতে পারেন। যেভাবেই হোক নারায়ণগঞ্জ নেমে চেম্বার রোডে এলেই যে কাউকে বললে বোস কেবিন দেখিয়ে দেবে। বোস কেবিনে গিয়ে ভ্রমণজনিত ক্লান্তি মুছে একটু আয়েশ করে বসুন। তারপর খাবারের ফরমাশ দিন। দেখবেন চলে এসেছে বোস কেবিনের গরম গরম মজাদার সব খাবার। বোস কেবিনের প্রতিষ্ঠাতা নৃপেন চন্দ্র বসু। সবাই তাঁকে ভুলুবাবু নামে চেনেন। বিক্রমপুরের ষোলঘর গ্রামের বাসিন্দা। ২০ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ। সেটা ১৯২১ সালের কথা। সে সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের ১ নম্বর রেলগেট এলাকার ফলপট্টিতে ছোট্ট একটি টংঘরে চা-নাশতার দোকান দিয়ে বসেন। সেই শুরু। শুরুর পরপরই টংঘরটি জনপ্রিয় হতে থাকে। এভাবেই একদিন ভুলুবাবুর টংঘরটি একটি রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়। নাম হয়ে যায় নিউ বোস কেবিন। বর্তমানে ভুলুবাবুর নাতি তারক চন্দ্র বসু বোস কেবিনের মূল পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই বোস কেবিনের খাবারের মান নিয়ে কোনো রকম আপস নেই জানালেন ব্যবস্থাপক সুজিত সাহা। একসময় বোস কেবিনে বিখ্যাত সব ব্যক্তির পায়ের ধূলা পড়েছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা আগেই বলেছি। তা ছাড়া আর যাঁদের পদভারে ধন্য হয়েছিল বোস কেবিন, তাঁরা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতারা।এছাড়া সৈয়দ শামসুল হকেরম মতো সাহিত্যিকও এসেছেন এ রেস্তোরাঁয়। এখানে আড্ডা আর খাওয়া দুটোই চলে একসঙ্গে।
কী খাবেন
এখানকার কড়া লিকারের চায়ের খুব নামডাক। দুপুরের দুই ঘণ্টা বাদে চা সারা দিনই পাবেন। সকালের নাশতায় পাবেন পরোটা, ভাজিসহ ডিমের ছয় রকম পদ, ডাল, হালুয়া, খাসি ও মুরগির মাংসের তরকারি। সকালে ডিমের ওমলেট স্পেশাল। এখানে দুপুরে ভাত বিক্রি হয় না। সকালের নাশতা শেষ হলে শুরু হয় মাংসের চপ, ডিমের চপ, কাটলেট, ভাজা মুরগি, মাংসের সঙ্গে সাদা পোলাও এবং বাটার টোস্ট বিক্রি। এখানকার কাটলেট এককথায় অসাধারণ। অনেকেই এখানে আসেন কেবল কাটলেটের টানে। মনে রাখবেন বোস কেবিন প্রতিদিন সকাল সাতটায় শুরু হয়ে চলে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। শুরু থেকেই এই নিয়মে চলছে বোস কেবিন।